একবছর আগে চুপিসারে নাবালিকাকে বিয়ে! স্ত্রী প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতেই পুলিসের জালে যুবক
বর্তমান | ২০ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: এক বছর আগে চুপিসারে নাবালিকাকে বিয়ে করেছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। নাবালিকা প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতেই পর্দা ফাঁস। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খবর পেয়ে যুবককে গ্রেপ্তার করল মাড়গ্রাম থানার পুলিস। তাই নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার ধৃতের বিরুদ্ধে পকসো আইনের ধারা যুক্ত করে রামপুরহাট আদালতে তোলা হয়। বিচারক চারদিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত বছর কুড়ির যুবকের নাম সোহেল শেখ। বাড়ি নলহাটি থানার পাখা খিদিরপুর গ্রামে। বছর খানেক আগে চুপিসারে সে মাড়গ্রাম থানা এলাকার বছর ষোলোর এক নাবালিকাকে বিয়ে করে। স্ত্রীকে নিয়ে কখনও পাখা খিদিরপুর, কখনও শ্বশুরবাড়িতে থাকছিল ওই যুবক। এরই মধ্যে নাবালিকা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। প্রসব যন্ত্রণা উঠলে দিন কয়েক আগে তাকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক প্রসূতির বয়স দেখে জানতে পারেন, সে নাবালিকা। তিনি বিষয়টি মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষকে জানান। এরপরই ভর্তির ঠিকানা দেখে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ নলহাটি থানায় জানায়। সেখানকার পুলিস তদন্তে নেমে জানতে পারে ওই যুবক মাড়গ্রাম থানা এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকে। সেইমতো মাড়গ্রাম থানাকে জানালে বুধবার রাতে ওই যুবককে শ্বশুরবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনায় পুলিসের পক্ষ থেকে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পকসো ধারায় মামলা করা হয়। পুলিস জানিয়েছে, ধৃত যুবক বিয়ের কোনও নথি দেখাতে পারেনি।
উল্লেখ্য, বাল্যবিবাহ ও নাবালিকা প্রসূতিতে রাজ্যের মধ্যে শীর্ষস্থানে বীরভূম। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো সরকারি প্রকল্প চালু করেছেন, সেখানেই বাল্যবিবাহের অভিশাপে মেয়েদের জীবন থেকে শিক্ষা ধীরে ধীরে দূরে চলে যাচ্ছে। বাল্যবিবাহের কুফল নিয়ে ধারাবাহিক প্রচার চললেও আটকানো যাচ্ছে না নাবালিকা বিয়ে ও অকাল মাতৃত্ব। অনেকে মারাও যাচ্ছেন। প্রশাসনিক কর্তাদের উদ্বেগ সেখানেই। এই পরিস্থিতি দূর করতে জেলা প্রশাসন, পুলিস, বিচার বিভাগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যদপ্তর মিলে উদ্যোগ নেয়। কিছুদিন আগে জেলাজুড়ে প্রতিটি স্কুলে শপথবাক্য পাঠ সহ নাবালিকা বিয়ের কুফল বোঝাতে নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। সেই সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, কোথাও নাবালিকা বিয়ে হলে দুই পরিবার, ডেকরেটার্স, পুরোহিত সহ সকলকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে। কিন্তু সেই ঘোষণা যে শুধুই কাগজ কলমে নয়, সেটা এই যুবকের গ্রেপ্তারের ঘটনাতেই প্রমাণ হল।
জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, নাবালিকা বিয়ে সামাজিক ব্যাধি। সেটা দূর করতে জেলা প্রশাসনের সর্বস্তরের আধিকারিক থেকে কর্মী একযোগে কাজ করছেন। নাবালিকা বিয়ে দিয়ে কেউ পার পাবেন না। অনেকেই বলছেন, প্রশাসন যদি এভাবে তৎপর থাকে, তাহলে নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে অনেকটা কমে আসবে।