• পূর্ব বর্ধমানে বাড়ছে গোখরো, কেউটে, সাপের কামড়ে গত পাঁচ মাসে মৃত্যু ১৪০ জনের
    বর্তমান | ২০ জুন ২০২৫
  • সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: সাপ নিয়ে চর্চার শেষ নেই। সেই ‘মনসা মঙ্গল’ থেকে হালফিলের ‘বেদের মেয়ে জোৎস্না’–কতই না বর্ণনা রয়েছে। কোথাও তিনি দেবী। আবার কোথাও অসুর নিধনকারী। আবার কল্পনার জগতেও বেশ জনপ্রিয় সাপের মাথার মণির কথা। তা হাতে পেলেই নাকি নিমেষে আকাশের চাঁদও ঘরে আসবে। এসব কাহিনী শুনে কারও মনে শিহরণ জাগে, আবার কেউ টিভির পর্দায় ফণা তুলে থাকার দৃশ্য দেখে অনেকে কপালে হাত ঠেকান। কিন্তু, বর্ষার মরশুমে মাঠে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা জানেন সাপ কত ভয়ঙ্কর। এক ছোবলেই ‘ছবি’ হয়ে গিয়েছেন অনেকেই। পূর্ব বর্ধমান জেলায় গত পাঁচ মাসে ১৪০জন মারা গিয়েছেন। এখনও চাষের কাজ পুরোদমে শুরু হয়নি। আলপথে ঘাস গজিয়ে ওঠেনি। তার আগেই ১৪০জনের প্রাণ গিয়েছে। ভরা বর্ষায় কী হবে, তা নিয়ে এখনই প্রশাসনের ঘুম ছুটে গিয়েছে।

    পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রানি এ বলেন, যেভাবে সাপের কামড়ে মৃত্যু হচ্ছে, তা সত্যিই চিন্তার বিষয়। মাঠে কাজ করার সময় প্রয়োজনীয় সাবধানতা নিতে হবে। হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার সবরকম ব্যবস্থা থাকছে। হাসপাতালগুলিতে অ্যান্টিভেনম মজুত করা হয়েছে। কাউকে সাপে কামড়ালে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। 

    পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, চাষিদের সুবিধার জন্য আমরা বিশেষ ধরনের বুট দিচ্ছি। কৃষকদের আবেদন খতিয়ে দেখে তা দেওয়া হবে। চাষিরা অবশ্য বলছেন, কাদা জমিতে জুতো পরে কাজ করা বেশ কষ্টকর ব্যাপার। মাঠে সাপের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। গোখরো, কেউটের পাশাপাশি অন্য প্রজাতির সাপও প্রচুর সংখ্যায় দেখা যাচ্ছে।

    রায়নার চাষি সুমন্ত মণ্ডল বলেন, আলের পাশে সাপ বেশি থাকে। অনেক সময় বোঝা যায় না। শরীরে পা পড়লেই সাপ কামড়ে দেয়। মাঝমাঠে কাউকে সাপে কামড়ালে, হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পিঠে বা কোলে চাপিয়ে রোগীদের নিয়ে আসা ছাড়া অন্য কোনও উপায় থাকে না। তাতে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যায়।

    হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু মাঠেই সাপের দৌরাত্ম্য রয়েছে এমনটা নয়। অনেকের ঘরের মধ্যেও গোখরো, কেউটে ওঁত পেতে থাকে। অসতর্ক হলেই দংশন করে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি তাপস ঘোষ বলেন, এখনও অনেকে ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাস করেন। হাসপাতালে রোগীকে দেরিতে আনা হলে কিছু করার থাকে না। যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে আনতে হবে।

    হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগে আউশগ্রামে এক ব্যক্তিকে সাপে কামড়ায়। পরিবারের লোকজন তাঁকে প্রথমে ওঝার কাছে নিয়ে যায়। দেরিতে হাসপাতালে নিয়ে আসার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়। জেলার বাসিন্দাদের সতর্ক করতে প্রশাসন প্রচার শুরু করেছে। কিন্তু, তারপরও অনেকে ওঝার দ্বারস্থ হচ্ছেন। সেই কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)