নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: প্রতি বছর আমন চাষের শুরুতে সার কিনতে চাষিদের কালঘাম ছুটে যায়। একশ্রেণির ব্যবসায়ী কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে ফায়দা তোলে। এমআরপির থেকে তারা অনেক বেশি দাম নেয়। এবার তারা যাতে কালোবাজারি করতে না পারে তারজন্য প্রথম থেকেই প্রশাসন সক্রিয় হচ্ছে। প্রতিটি ব্লকে আলাদা ‘কমিটি’ তৈরি করা হচ্ছে। তারা ডিলারদের গোডাউনে অভিযান চালাবে। কোন গোডাউনে কত পরিমাণ সার মজুত রয়েছে, কতটা বিক্রি হচ্ছে, প্রতিদিনই তাঁরা সেই হিসেব জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের কাছে পৌঁছে দেবেন। রসিদ ছাড়া কোনওভাবেই ডিলার বা দোকানদাররা সার বিক্রি করতে পারবেন না। চাষিরা আঙুলের ছাপ দিয়ে সার কিনতে পারবেন।
পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রানি এ বলেন, প্রতিটি ব্লকে নজরদারি চলবে। তাছাড়া, কোথাও সারের দাম বেশি নেওয়া হলে চাষিরা সরাসরি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। কোনও দোকানদার বা ডিলার সার বিক্রির পর রসিদ না দিলে, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃষ্টির অভাবে এতদিন জেলায় বীজতলা তৈরি হয়নি। দু’দিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় বীজতলা তৈরির কাজ জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছে। কিছুদিন পর থেকে চাষিরা জমির মাটি তৈরির কাজে নামবেন। তার আগে অনেকেই সার কিনে রাখেন। গলসির চাষি শ্রীদাম পাত্র বলেন, বিগত পাঁচ বছরে সারের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছে। কীটনাশকের দামও বেড়েছে। তারপর কালোবাজারি হলে চাষিদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে। গত বছর আলু চাষের মরশুমে প্রশাসন প্রথম থেকেই সক্রিয় হয়েছিল। সেই কারণে তারা কালোবাজারি করতে পারেনি। ধান চাষের সময়ও একইরকম পদক্ষেপ নেওয়া হলে চাষিরা স্বস্তি পাবেন।
অপর এক চাষি সিরাজুল শেখ বলেন, চাষের সমস্ত খরচ বেড়ে গিয়েছে। সেই তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি। পেট্রল বা ডিজেলের দাম বাড়ার জন্য ট্রাক্টরের ভাড়া বেড়ে গিয়েছে। শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। এমনকী, বীজ ধানের দামও বেড়েছে। সারের দাম অনিয়ন্ত্রিত হলে চাষিরা লাভের মুখ দেখতে পারবেন না। খরচ করার পরও ধানের উৎপাদন ভালো হবে, তা মনে করার কারণ নেই। বন্যা হলে বহু জমির ধান নষ্ট হয়ে যায়।
কৃষিদপ্তর জানিয়েছে, ধান চাষের জন্য যেসব সার দরকার হয়, তা যথেষ্ট পরিমাণে মজুত রয়েছে। কালোবাজারি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তারপরও কোনও ডিলার বা দোকান দাম বেশি নিলে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। জেলাশাসক বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে কৃষিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। সেখানেই সারের উপর নজরদারি চালানোর জন্য কমিটির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।