অপু রায়, নকশালবাড়ি: ডাক্তার হয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিলেন নকশালবাড়ির চা মহল্লার মেয়ে অপর্ণা লিম্বু। বাবা কমল লিম্বু অটল চা বাগানের সাতভাইয়া ডিভিশনের স্থায়ী শ্রমিক। তাঁর মেয়ের এই সাফল্য নিয়ে চর্চা চলছে চা মহল্লার আনাচেকানাচে।
সপ্তাহ দু’য়েক আগে এমবিবিএসের সার্টিফিকেট নিয়ে ঘরে ফিরেছেন অপর্ণা। এখন এমএস পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে ডাক্তার হওয়ার তাঁর এই যাত্রা একেবারে সহজ ছিল না। আর্থিক অভাব থাকলেও মেয়ের পড়াশোনায় কোনও অসুবিধা হতে দেননি কমল। এলাকায় হাতির আতঙ্ক। বাগানের দেওয়া পাঁচ ঘণ্টার বিদ্যুৎ পরিষেবা। এমন সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে ২০১৬ সালে হাতিঘিষার সেন্ট ভিনসেন্ট স্কুল থেকে মাধ্যমিকে ৮০ শতাংশ পেয়ে পাশ করেন অপর্ণা। পরে গয়াগঙ্গার সেন্ট পিটার্স স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ৭২ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। প্রথমবার নিট পরীক্ষায় পাশ না করলেও দ্বিতীয়বার ভালো ফল করেন। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পড়ার সুযোগ পান।
মেয়ে মুর্শিদাবাদে থেকে কীভাবে পড়াশোনা করবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন লিম্বু দম্পতি। তবে আত্মীয়ারা আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় সেই চিন্তা কাটে। অপর্ণা দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় মৃত্যু হয় তাঁর মা অম্বু লিম্বুর। সেই শোক থাকলেও লক্ষ্যভ্রষ্ট হননি অপর্ণা। ২০২৪ সালে এমবিবিএস পরীক্ষায় সফল হন। এক বছরের বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ করে সপ্তাহ দু’য়েক আগে ঘরে ফিরেছেন তিনি।
অপর্ণার বাবা বলেন, মেয়ের ডাক্তারি পড়াশোনায় আত্মীয়রা অনেক সাহায্য করেছেন। প্রায় সাত লক্ষ টাকা দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের কাছে ঋণী। এখন সেই অর্থ ফেরত দেব।
লক্ষ্যপূরণ হওয়া প্রসঙ্গে অপর্ণার মন্তব্য, কঠোর পরিশ্রম করলে সাফল্য পাওয়া যায়। তবে, পরিবারের পাশে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পোস্ট গ্রাজুয়েট করে জেনারেল সার্জেন হতে চাই। আর্থিক সমস্যার জেরে চা বাগানের অনেক পড়ুয়া পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। তবে ধৈর্য্য ধরে পড়াশোনা করলে সাফল্য মিলবে।