• ‘মুঙ্গেরী কাট্টা-রাজা’ পাচারে সিদ্ধহস্ত মণিরুল, জাল ছড়িয়েছে বাংলাদেশেও
    বর্তমান | ২০ জুন ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কালিয়াচক: মুঙ্গের থেকে বাংলাদেশ। ভায়া মোজমপুর। এই রুটে অস্ত্র পাচারে সিদ্ধহস্ত কালিয়াচকের মোজমপুরের কুখ্যাত কারবারি মণিরুল ইসলাম। মঙ্গলবার রাতে বাড়ির পিছনের লিচু বাগানের গোপন আস্তানা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। উদ্ধার হয় ছ’টি আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, মণিরুল আন্তঃরাজ্য অস্ত্র কারবারের সঙ্গে যুক্ত। তার হাত ধরেই বাংলার বিভিন্ন জেলা সহ পার্শ্ববর্তী বিহারে অস্ত্রের কারবার চলে। সেখানকার অস্ত্র কারবারিদের সঙ্গেও তার গভীর আঁতাত রয়েছে। এমনকী বাংলাদেশেও সে অস্ত্র পাচার করত। প্রায় ২০ বছর ধরে মণিরুল অবৈধ অস্ত্রের কারবার করে আসছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, প্রথম দিকে মণিরুল মুঙ্গের থেকে অস্ত্র নিয়ে এসে বিক্রি করত। পরবর্তীতে পুলিস ও গোয়েন্দাদের কড়া নজর এড়িয়ে অস্ত্র নিয়ে আসতে সমস্যায় পড়ে। কারণ, তখন অস্ত্র আনতে নদীপথ বা সড়ক পথ ব্যবহার করতে হতো। কিন্তু বারবার যাতায়াতে পুলিস ও গোয়েন্দাদের নজরে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি ছিল। এরপরেই সে মুঙ্গেরের অস্ত্র তৈরির কারিগরদের মোজমপুরের গোপন আস্তানায় নিয়ে এসে অস্ত্র তৈরি করতে শুরু করে। তার কারখানায় তৈরি আগ্নেয়াস্ত্রের চাহিদাও ছিল তুঙ্গে। সেই আগ্নেয়াস্ত্র ‘মুঙ্গেরী কাট্টা’ ও ‘মুঙ্গেরী রাজা’ নামে পাচার হতো রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। এমনকী বাংলাদেশেও পাঠানো হতো। পাইপগান যা মূলত মুঙ্গেরী কাট্টা নামে বিক্রি হয়। তার দাম ১০-১৫ হাজার, পাশাপাশি সেভেন এমএম পিস্তল মুঙ্গেরী রাজা নামে পরিচিত। যা ৪০-৫০ হাজারে বিক্রি হয়।  মণিরুলের কারখানায় তৈরি অস্ত্র চোরাকারবারিদের হাত হয়ে বাংলাদেশে প্রায়‌ই পাচার হয়। সেই সূত্রে ওপার বাংলার দুষ্কৃতীদের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি একাধিক তদন্তকারী সংস্থার। স্কুলের গণ্ডি না পেরলেও মনিরুলের প্রখর বুদ্ধি। সহজেই নিজের নেটওয়ার্ক তৈরি করে নিত। পুলিসের চোখে ধুলো দিতে ঘনঘন বদলে ফেলত নিজের ফোন নম্বর‌ও। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আর‌ও তথ্য জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দিকে অর্থাৎ কৈশোরে কালিয়াচকের আরেক কুখ্যাত দুষ্কৃতী আসাদুলের হাত ধরে মণিরুল সমাজবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত হয়। ধীরে ধীরে সে অস্ত্র ব্যবসায় সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠে। হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে সাগরেদদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মুঙ্গের গ্যাংয়ের খাস লোক হয়ে ওঠে মণিরুল। প্রায়ই তার কাছে হিন্দিভাষীরা আসত। কয়েকদিন থাকার পর আবার চলে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। মালদহের পুলিস সুপার প্রদীপ কুমার যাদব বলেন, উদ্ধার হ‌ওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগুলি মণিরুল এলাকার মাদক কারবারিদের কাছে বিক্রির জন্য মজুত করেছিল। এছাড়াও অন্য সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আদালতের নির্দেশে পুলিস হেফাজতে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)