প্রথম বছরেই আই লিগ জিতে লক্ষ্য আইএসএল, তৃতীয় প্রধান হওয়ার দৌড়ে ছুটছে ডায়মন্ডহারবার
প্রতিদিন | ১৯ জুন ২০২৫
দুলাল দে: ক্লাবের বয়স মাত্র তিন বছর। তার মধ্যেই ইন্ডিয়ান সুপার লিগে ওঠার হাতছানি ‘ডায়মন্ড হারবার এফসি’র সামনে। আর তা মাথায় রেখেই কিবু ভিকুনার কোচিংয়ে আই লিগের দলটাকে কলকাতা লিগের দল থেকে পুরোপুরি আলাদা করে ফেলেছে ডায়মন্ড হারবার।
এখনও কলকাতা লিগই শুরু হল না। আই লিগ তো দূর অন্ত। এমনকী ফেডারেশন কবে আই লিগ শুরু করবে তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই। তবুও একটা দিনও নষ্ট করতে রাজি নন ডায়মন্ড হারবার কোচ কিবু ভিকুনা। আইএসএলকে পাখির চোখ করে বিদেশি ছাড়া এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছেন আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রস্তুতি। সেখানে আই লিগের অন্য দলগুলি এখনও দল গঠনও ঠিকভাবে করে উঠতে পারল না।
খাতায়-কলমে হয়তো লেখা থাকবে ডায়মন্ড হারবার এবার দু’রকম দল তৈরি করেছে। সিনিয়র দলের ৩০ জন ফুটবলার প্রস্তুতি নেবে শুধুমাত্র আই লিগের জন্য। আরেকটি দলের ফুটবলাররা কলকাতা লিগের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন কোচ দীপান্ডুর শর্মার অধীনে। এটাই রিজার্ভ টিম ডায়মন্ড হারবারের। এগুলি রয়েছে সবই সরকারি ভাবে। এর বাইরে প্রথম ডিভিশনের ক্লাব ইয়ং কর্নার দল গঠন করেছে ডায়মন্ড হারবারের রিজার্ভ দলের বেশ কিছু ফুটবলারকে নিয়ে। নিজেদের দু’টো দলের বাইরে অন্য একটি দলে ডায়মন্ড হারবারের ফুটবলার দেওয়ার প্রসঙ্গে ক্লাবের সহ সভাপতি আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, “আই লিগের পাশাপাশি আমরা এই মরশুমে আরএফডিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য ভীষণভাবে সচেষ্ট। কলকাতা লিগে আমাদের যে দলটা খেলবে, তার বাইরেও অনেক জুনিয়র ফুটবলার বসে থাকবে। এই অবস্থায় যদি বসে থাকা জুনিয়র ফুটবলারদের প্রথম ডিভিশনের অন্য একটি দলে খেলাতে পারি, তাহলে দেখে নেওয়ার সুযোগ থাকবে, ইয়ং কর্নার থেকে ভাল কোনও ফুটবলার পাওয়া যায় কি না। তাহলে আরএফডিএলের পাশাপাশি আই লিগের দলেও নেওয়া যাবে। এক কথায়, আমরা কাউকেই বসিয়ে না রেখে দলের সবাইকে দেখে নেওয়ার সুযোগ পাব।”
গত মরশুমের লিগ চ্যাম্পিয়নশিপ এখনও ঠিক হয়নি। কে চ্যাম্পিয়ন, ইস্টবেঙ্গল না ডায়মন্ড হারবার, তার মীমাংসা ঝুলে রয়েছে আদালতে। এই অবস্থায় এই মরশুমের কলকাতা লিগের প্রস্তুতি নিতে নেমেছে ডায়মন্ড হারবার। এই প্রসঙ্গে মোহনবাগানের উদাহরণ টেনে আকাশ বলছিলেন, “মোহনবাগান যখন গত বছর লিগের সুপার সিক্সে যেতে পারেনি, অনেকে অনেক কথা বলেছিল। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, মোহনবাগান ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। জুনিয়র ফুটবলারদের দেখে নেওয়ার জন্য সারা বছর আর কোনও প্রতিযোগিতা নেই। এই অবস্থায় কলকাতা লিগটাই আসল জায়গা জুনিয়র ফুটবলারদের দেখে নেওয়ার জন্য। কলকাতা লিগে খেলার সুযোগ পেয়েছিল বলেই মোহনবাগানের সুহেল ভাট কিন্তু এখন জাতীয় দলে খেলতে পারছে।”
আই লিগে উঠেছে বলেই নয়। প্রথম ডিভিশন থেকেই অত্যন্ত পেশাদার দৃষ্টিভঙ্গিতে চলছে ডায়মন্ড হারবার এফসি। টিম বাস থেকে শুরু করে পুরোটা মরশুম পুরো দলটা থাকছে ভিআইপি রোডে ‘সার্কেল ক্লাবে।’ কোচ কিবু ভিকুনা সামনেই অন্য একটি হোটেলে। আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনের মতো এই মরশুমেও নৈহাটির মাঠকে আই লিগে হোম গ্রাউন্ড হিসেবে দেখাবে ডায়মন্ড হারবার। কিন্তু আইএসএলে উঠে গেলে তখন? আকাশ বললেন, “আগে তো উঠি। তখন ঠিক কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।” শোনাচ্ছিলেন, প্রথম বছর কলকাতা লিগে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা। “মাত্র ১৫ দিনের প্রস্তুতিতে প্রথম বছর দল গঠন করতে হয়েছিল আমাদের। দল তৈরি করা নিয়ে সেভাবে অভিজ্ঞ ছিলাম না। কিন্তু এখন প্রত্যেকটি দলে কারা কারা ভাল খেলছে, সব তথ্য আমাদের নখদর্পণে থাকে।”
আই লিগের জন্য বেশ কিছু বিদেশি ফুটবলারের সঙ্গে চুক্তি মোটামুটি পাকা হয়ে গিয়েছে। যেহেতু এখন খেলা নেই, তাই এই মুহূর্তে নিয়ে আসা হচ্ছে না। আই লিগে ভালো দল গড়ার জন্য আইএসএলের ক্লাব থেকেও বেশ কিছু ফুটবলার নিচ্ছে ডায়মন্ডহারবার। পাঞ্জাব এফসি থেকে নেওয়া হয়েছে স্টপার মেলরয়কে। সই করেছেন ওড়িশার মিডফিল্ডার রেনথলিও। সই করে দিয়েছেন গোলকিপার মিরশাদ মিচুও। আরও বেশ কিছু ফুটবলার নেওয়া হচ্ছে আইএসএলের বিভিন্ন ক্লাব থেকে। অচিরেই বাংলার ফুটবলে তৃতীয় প্রধানের তকমা পেতে দৌড়চ্ছে ডায়মন্ড হারবার এফসি।