বাংলা সাহিত্যে নক্ষত্রপতন, প্রয়াত ‘কেয়া পাতার নৌকো’-র স্রষ্টা প্রফুল্ল রায়
প্রতিদিন | ১৯ জুন ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘কেয়া পাতার নৌকো’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’-এর স্রষ্টা তিনি। সেই কিংবদন্তি সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায় প্রয়াত হলেন এক বৃষ্টিস্নাত আষাঢ়ের দুপুরে। বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। ভর্তি ছিলেন একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই বিশিষ্ট বাঙালি সাহিত্যিক প্রয়াত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ১৯৯২ সালে সংবাদ প্রতিদিন-এর সাহিত্য বিভাগের প্রথম সম্পাদক ছিলেন প্রফুল্ল রায়।
নবতিপর লেখকের ঘনিষ্টজনেরা জানাচ্ছেন, গত এক বছরে শারীরিক সমস্যা বেড়ে গিয়েছিল প্রফুল্লের। ফলে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নতুন করে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। ক্রমশ সংকটজনক হয়ে উঠছিল পরিস্থিতি। সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল শ্বাসকষ্ট। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
বাংলা কথাসাহিত্যের একটি জনপ্রিয় ধারার নাম প্রফুল্ল রায়। ১৯৩৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত বাংলার ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের আটপাড়া গ্রামে লেখকের জন্ম। ১৯৫০ সালে সপরিবারে কলকাতার বাসিন্দা হন। সংগ্রামরত মানুষের জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতা অর্জনে সারা দেশ ভ্রমণ করেন প্রফুল্ল। ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস ‘পূর্ব পার্বতী’। একে একে উদ্বাস্তু জীবনকেন্দ্রিক উপন্যাস ‘কেয়া পাতার নৌকো’ (২০০৩), ‘শতধারায় বয়ে যায়’ (২০০৮), ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’ (২০১৪), ‘নোনা জল মিঠে মাটি’ (বাং ১৩৬৬) ইত্যাদি। গল্প উপন্যাস মিলিয়ে দেড় শতাধিক গ্রন্থপ্রণেতা তিনি।
প্রফুল্ল রায়ের গল্প ও উপন্যাস অবলম্বনে বহু টেলিফিল্ম, টেলি-ধারাবাহিক, সিনেমা নির্মিত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ‘এখানে পিঞ্জর’ (১৯৭১), ‘বাঘবন্দি খেলা’ (১৯৭৫), ‘মোহনার দিকে’ (১৯৮৪), ‘আদমি আউর আউরত’ (১৯৮৪), ‘একান্ত আপন'(১৯৮৭), ‘চরাচর'(১৯৯৪), ‘টার্গেট’ (১৯৯৭), ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ (২০০৩), ‘ক্রান্তিকাল’ (২০০৫) ইত্যাদি। একজীবনে বহু পুরস্কার পেয়েছেন এই লেখক। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বঙ্কিম পুরস্কার, পাবলিশার্স এন্ড বুক সেলার্স গিল্ড-এর ‘লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট’ পুরস্কার। ‘ক্রান্তিকাল’ উপন্যাসের জন্য ২০০৩ সালে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান তিনি।