• সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায় প্রয়াত, ‘কেয়া পাতার নৌকো’র স্রষ্টার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর
    আনন্দবাজার | ১৯ জুন ২০২৫
  • সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায় প্রয়াত। দীর্ঘ দিন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। গত কয়েক মাস ধরে তাঁর চিকিৎসা চলছিল দক্ষিণ কলকাতার একটি হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টে ১৫ মিনিট নাগাদ ওই হাসপাতালেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

    প্রফুল্লের ঘনিষ্ঠেরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন সাহিত্যিক। তবে গত কয়েক মাসে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল। শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়েছিল। পরিস্থিতি ক্রমশ সঙ্কটজনক হয়ে উঠলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নেন আত্মীয়েরা। সেখানেই মৃত্যু হল তাঁর।

    বাংলা সাহিত্যের জগতে প্রফুল্লের অবদান অনস্বীকার্য। ‘কেয়া পাতার নৌকো’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘নোনা জল মিঠে মাটি’র মতো উপন্যাস পাঠকদের উপহার দিয়েছেন তিনি। পরবর্তীকালে তাঁর ‘কেয়া পাতার নৌকো’র কাহিনি অবলম্বন করে নির্মিত বাংলা ধারাবাহিক বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। তাঁর গল্প অবলম্বনে তৈরি ‘বাঘ বন্দী খেলা’ ছবিতে অভিনয় করেছেন উত্তম কুমার। ‘আকাশের নেই মানুষ’ উপন্যাসের জন্য তিনি পেয়েছিলেন বঙ্কিম পুরস্কার। ঝুলিতে রয়েছে সাহিত্য অকাদেমিও। এ ছাড়া, দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে অসংখ্য ছোটগল্প লিখেছেন প্রফুল্ল। যা বিভিন্ন সময়ে পাঠকের মন ছুঁয়ে গিয়েছে।

    ১৯৩৪ সালে অবিভক্ত বাংলার ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রফুল্ল। দেশভাগের পর ১৯৫০ সালে চলে আসেন ভারতে। তার পর থেকে কলকাতাতেই থাকতেন। দেশভাগের যন্ত্রণা, উদ্বাস্তুদের কথা তাঁর লেখনীতে মূর্ত হয়ে উঠেছিল। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে একের পর এক বইতে সেই যন্ত্রণার বর্ণনা করেছেন তিনি। বেশ কিছু দিন ছিলেন নাগাল্যান্ডেও। সেখান থেকেই ১৯৫৬ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘পূর্ব পার্বতী’ প্রকাশিত হয়। গল্প এবং উপন্যাস মিলিয়ে তাঁর দেড়শোর বেশি সৃষ্টি ছড়িয়ে রয়েছে। বৃহস্পতিবার তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলার সাহিত্যমহল।

    পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রফুল্লের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘‘বর্ষীয়ান কথাসাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়ের মৃত্যুতে আমি গভীর শোক জ্ঞাপন করছি। তিনি পূর্ববঙ্গে জন্মেছিলেন। তাঁর নানা গ্রন্থে উদ্বাস্তু জীবনের যন্ত্রণা ফুটে উঠেছিল। ‘কেয়াপাতার নৌকো’ তাঁর কালজয়ী উপন্যাস। নানা সময়ে নানা সংবাদপত্র-পত্রিকা গোষ্ঠীর সঙ্গেও তিনি ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করেছেন। বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় স্থায়ী জায়গা পেয়েছেন। ২০১২ সালে আমরা তাঁকে একটি বিশেষ পুরস্কার দিতে পেরেছিলাম। আমি তাঁর পরিবার ও অগণিত পাঠকের প্রতি সমবেদনা নিবেদন করছি।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)