বিধানসভায় ‘সেলস ট্যাক্স’ নিয়ে আলোচনায় ‘অসংসদীয় আচরণ’! বিবরণী থেকে বিজেপির বক্তব্য বাদ দিলেন স্পিকার বিমান
আনন্দবাজার | ১৯ জুন ২০২৫
বিধানসভায় বৃহস্পতিবার ‘সেলস ট্যাক্স সংশোধনী বিল’ নিয়ে আলোচনার সময় আবার সংঘাতে জড়াল শাসক এবং বিরোধী শিবির। রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের জবাবি ভাষণের মাঝেই ওয়াকআউট করেন বিজেপি বিধায়কেরা। তার জেরে বিধানসভার বিবরণী থেকে বিরোধীদের বক্তব্য বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীদের আচরণকে ‘অসংসদীয়’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অন্য দিকে, ডেঙ্গি আক্রান্তের পরিসংখ্যান বৃহস্পতিবার বিধানসভায় পেশ করেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। খিদিরপুরে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে রাজ্যের দিকে আঙুল তোলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর জবাব দেন ফিরহাদ। আরও কয়েকটি বিষয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব দেন রাজ্যের মন্ত্রীরা।
বিবরণী থেকে বাদ
সেলস ট্যাক্স আলোচনায় রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমার জবাবি ভাষণ না-শুনেই বেরিয়ে যান বিজেপি বিধায়কেরা। তার জেরে তাঁদের বক্তব্য বিবরণী থেকে বাদ দেন স্পিকার বিমান। তিনি অধিবেশনের পরে বলেন, ‘‘বিরোধী দলের লোকজনকে অনুরোধ করি, যাবেন না। মন্ত্রী উত্তর দেবেন। আমার অনুরোধে গুরুত্ব না-দিয়ে ওঁরা বেরিয়ে গেলেন। রুলস অফ প্রসিডিয়োর অ্যান্ড কন্ডাক্ট অফ বিজ়নেসের ৩২৫ ধারায় বলা রয়েছে, বিরোধীদের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরেই অধিবেশন ছেড়ে চলে যাওয়া যাবে না। এটা সংসদীয় সৌজন্য লঙ্ঘন করে। বিধানসভা চলাকালীন যখন মন্ত্রী উত্তর দিচ্ছেন, তখন চলে যাওয়া শোভন নয়।’’ এর পরেই স্পিকার নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘‘সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ওঁদের যে বক্তব্য, তা রেকর্ডে যাবে না। এ রকম আচরণ দেখেছেন কোনও বিধানসভা বা লোকসভায়?’’ তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, বিরোধীদের বাদ দিয়ে হাউস চালানো তিনি পছন্দ করেন না। কিন্তু বিরোধীদের এই আচরণ তাঁর চেয়ারকে অবমাননা করেছে। বিমান বলেন, ‘‘আবার এই আচরণ করলে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিরোধীদের ৫০ শতাংশ সময় দেওয়া হয়। বিরোধীদের ৬৫-৭০ শতাংশ প্রশ্ন করার সুযোগ করে দিই। তার পরেও তাঁরা অসংসদীয় আচরণ করলেন।’’
ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ
কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্তের পরিসংখ্যান বিধানসভায় পেশ করলেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ। তিনি জানিয়েছেন, ২০২২ সালে কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮,৮১৫। ২০২৩ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১,৪০২। ২০২৪ আক্রান্তের সংখ্যা ১,৩২৪। ২০২৫ সালে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১১৫ জন। নিয়ন্ত্রণের কৃতিত্ব তিনি দিয়েছেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষকে। কলকাতার মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ বলেন, “অতীনকে ডক্টর অতীন ঘোষ বললেও অতিশয় উক্তি হবে না।” ফিরহাদের কথা শুনে হেসে ফেলেন অধিবেশনে উপস্থিত বিধায়কেরা। হেসে ফেলেন অতীন নিজেও।
খিদিরপুরকাণ্ড
খিদিরপুরের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে বিধানসভায় সরব বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, অগ্নিকাণ্ডে গত ১৪ বছরে সামগ্রিক ভাবে ১৫০ জন মারা গিয়েছেন। ৩৫০টি ইঞ্জিন রয়েছে। রাজ্যে ১৫০টি দমকলকেন্দ্র রয়েছে। ২০০০-এর বেশি দমকলকেন্দ্র প্রয়োজন। কলকাতায় মাত্র ১৮টি আছে। তাঁর আরও দাবি, দমকল বিভাগে আধুনিক প্রযুক্তি নেই। বাধ্যতামূলক মহড়া দেখা যায় না। সোমবার খিদিরপুরের অরফ্যানগঞ্জ বাজারে মাঝরাতে আগুন লাগে। অন্তত ১৩০০টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। বিধানসভায় শুভেন্দু আরও দাবি করেন, গত কয়েক দিনে ১২টি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে কলকাতায়। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আগুন লাগছে, না লাগানো হচ্ছে? অনেকাংশে জমি মাফিয়া এবং প্রোমোটারদের হাতে সেই সব জমি চলে যাচ্ছে। এ সবের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হোক।’’ জবাবে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “অগ্নিকাণ্ড নিয়ে রাজ্য সরকার একটি কমিটি তৈরি করেছে, যার চেয়ারম্যান আমি। এই কমিটিতে দমকলমন্ত্রী এবং বিদ্যুৎমন্ত্রী রয়েছেন। শীঘ্রই এ বিষয়ে বৈঠক করে এসওপি জারি করা হবে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়ে গরিব মানুষকে উচ্ছেদ করে জমি প্রোমোটারদের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ এই সরকারের আমলে ঘটেছে বলে কেউ অভিযোগ করতে পারবেন না।’’
অবন ঠাকুরের বাড়ি
বোলপুরে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি প্রোমোটারের হাতে চলে যাওয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার বিধানসভায় প্রশ্ন তোলেন আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। জবাবে পর্যটনমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বলেন, “বাড়িটি সরকারি নয়। তাই ঘটনাটির কথা জানার পরেই আমরা অবন ঠাকুরের বাড়ি রক্ষা করার চেষ্টা শুরু করি। কিন্তু বাড়িটি নিয়ে মালিকানা বিষয়ক ঝামেলা থাকায় আমাদের হস্তক্ষেপে লাভ হয়নি। তাই আমরা বাড়িটি রক্ষা করতে পারিনি। যাঁরা বাড়িটি নষ্ট করেছেন, তাঁদের আমি ধিক্কার জানাই। এই ধরনের ঐতিহ্যবাহী বাড়ির ঠিকানা জানা থাকলেই পদক্ষেপ করবে রাজ্য সরকার।” জুন মাসের শুরুতে শান্তিনিকেতনে অবনীন্দ্রনাথের বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। বোলপুর পুরসভার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সেই বাড়ি ভেঙে ফেলার অভিযোগ ওঠে।
কত পর্যটক
সার্ক দেশগুলি বাদ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের মতো দেশগুলি থেকে কত সংখ্যক বিদেশি পর্যটক এসেছেন? শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের এই প্রশ্নের জবাবে পর্যটনমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন জানিয়েছেন, গত বছর পশ্চিমবঙ্গে মোট বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৩২ লক্ষ। অনেকেই বলেন, এই পর্যটকদের বেশির ভাগই বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন। কিন্তু গত বছর মাত্র ১ লক্ষ ৮২ হাজার বাংলাদেশি পর্যটক এসেছিলেন। আর এ বছর এখনও পর্যন্ত আমেরিকা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং ইটালি-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ২৭ লক্ষ ১১ হাজার ৭০৮ জন পর্যটক কলকাতা এসেছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী।
দুষ্প্রাপ্য বই
রাজ্য সরকারের উদ্যোগে দুষ্প্রাপ্য ৩৫ হাজার বই ‘ডিজ়িটাইজ়’ করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিধানসভায় দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহার প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানিয়েছেন রাজ্যের গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। পাশাপাশি, বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলির জেলাশাসকদের তাঁদের অধীনে থাকা লাইব্রেরিগুলিতে কোনও দুষ্প্রাপ্য বই থাকলে তা গ্রন্থাগার দফতরকে জানাতে বলা হয়েছে। তা হলে দফতরের তরফে ওই সব বই ডিজ়িটাইজ় করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।