কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে এ বার ছিল মূলত ত্রিমুখী লড়াই। গত বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী নাসিরউদ্দিন আহমেদ তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির অভিজিৎ ঘোষকে ৪৬ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসে ৭০ বছর বয়সি বিধায়কের মৃত্যু হয় আচমকা। তার ফলে এই উপনির্বাচন। এ বার নাসিরুদ্দিনের কন্যা আলিফা আহমেদকে কালীগঞ্জ থেকে প্রার্থী করেছে রাজ্যের শাসকদল। এ ছাড়া, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ময়দানে আছেন বিজেপির আশিস ঘোষ এবং বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী কাবিলউদ্দিন আহমেদ।
কালীগঞ্জে মোট ৩০৯টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়েছে বৃহস্পতিবার। তার মধ্যে ১৮০টি বুথে এজেন্ট দিয়েছিল বিজেপি। বাকি ১২৯টি বুঝে বিজেপির কোনও এজেন্ট ছিলেন না। সকালের দিকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিক্ষিপ্ত কিছু অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। ২১ নম্বর বুথ থেকে কংগ্রেস এজেন্টকে বার করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আবার, চাঁদঘর আদর্শ বিদ্যাপীঠের ৫৬ নম্বর বুথে বিজেপির পোলিং এজেন্টকে বসতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ ওঠে। যদিও এই সমস্ত অভিযোগ তৃণমূল অস্বীকার করেছে। বিক্ষিপ্ত ভাবে দু’একটি ঘটনা ছাড়া বড় কোনও অশান্তি হয়নি কালীগঞ্জে।
উপনির্বাচন চলাকালীন বৃহস্পতিবার বিকেলে নদী পারাপারের সময়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কালীগঞ্জের ভোটারদের একটি নৌকো। স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, কালীগঞ্জের ফুলবাগান চৌধুরীপাড়া গ্রামে ২৬৫ জন ভোটার রয়েছেন। কিন্তু সেখানে কোনও বুথ না-থাকায় নদী পেরিয়ে তাঁদের ভোট দিতে যেতে হয়। সকাল থেকে গ্রামের অনেকেই নদী পেরোচ্ছিলেন। কিন্তু আচমকা একটি নৌকোর মাঝি নদীতে পড়ে যান। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ওই মাঝিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর ফলে ভোটারেরা সমস্যায় পড়েন। স্থানীয় সূত্রে খবর, গ্রাম থেকে ভোটারদের আনতেই যাচ্ছিল নৌকোটি। পরে ওই ভোটারদের নদী পার করাতে উদ্যোগী হন বিজেপি প্রার্থী আশিস।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কালীগঞ্জে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। সকাল ১০টা পর্যন্ত তুমুল বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ভোটকেন্দ্রে জড়ো হতে দেখা যাচ্ছিল স্থানীয়দের। বেলার দিকে বৃষ্টির দাপট খানিকটা কমলে ভোটারের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। তবে সারা দিনই কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে। ৬৪ নম্বর বুথে দিঘিরপাড়ায় তৃণমূল প্রার্থী আলিফার গাড়ি খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কাদায় বসে গিয়েছিল গাড়ির চাকা। বেশ কিছু ক্ষণ তাঁর গাড়ি আটকে থাকার পর ভোটারদের একাংশই সেটিকে ঠেলে তোলেন।
আগামী সোমবার, ২৩ জুন কালীগঞ্জ উপনির্বাচনের ফল ঘোষিত হবে। তা নিয়ে আশাবাদী আলিফা। বলেছেন, ‘‘কালীগঞ্জের মানুষ উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোটারেরা বুথে এসেছিলেন, যা তৃণমূলের প্রতি তাঁদের আস্থার প্রমাণ। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মা- মাটি-মানুষের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ২৩ জুন দেখবেন আমরা রেকর্ড ব্যবধানে জিতেছি।’’ বিজেপি প্রার্থী আশিসের মতে, কালীগঞ্জের উপনির্বাচনে সাধারণ মানুষের রোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। তিনি বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের তোষণ নীতি, দুর্নীতি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যর্থতার বিরুদ্ধে কালীগঞ্জের মানুষ স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন বলে আমার বিশ্বাস। ভোটারেরা বুঝেছেন যে, শাসকদল ভয় দেখিয়ে ভোটের ফল বদলাতে চায়। কিন্তু এ বার তা সম্ভব হয়নি। গণনার দিন প্রমাণ হবে, বিজেপিই প্রধান বিকল্প।’’ কংগ্রেসের কবিলউদ্দিনের কথায়, ‘‘ধর্মীয় মেরুকরণের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তৃণমূল ও বিজেপি— উভয়েই সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। কিন্তু মানুষ জবাব দিয়েছে। আমাদের সমর্থকেরা গ্রামে গ্রামে সেই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। ভাল ফলের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’’