পেশায় একটি ট্যুর এবং ট্রাভেল সংস্থার মালিক তিনি। কিন্তু সেই ব্যবসার আড়ালে মস্তবড় প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছিলেন রায় বাবু। যে প্রতারণার ফাঁদ ছড়িয়েছিল বীরভূম থেকে বাঁকুড়া জেলায়। সরাসরি নয়, প্রতারণার টাকা একের পর এক ধাপ পেরিয়ে পৌঁছে যেত তাঁর কাছে। অবশেষে নিমতায় বাঁকুড়ার সোনামুখী থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন প্রতারণা চক্রের মূল পান্ডা রায় বাবু ওরফে শিবু মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার ধৃতকে বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হলে আদালত তাঁকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ২৮ নভেম্বর বীরভূমের রামপুরহাটের পাথর ব্যবসায়ী চন্দন সিংহ টেলিফোনে বাঁকুড়ার সোনামুখী শহরে দু’ট্রাক পাথর সরবরাহের বরাত পান। পাথর নিয়ে ট্রাকগুলি সোনামুখী পৌঁছোলেই পাথরের দাম দিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। পরের দিনই ওই ব্যবসায়ী দু’ট্রাক পাথর বাঁকুড়ার সোনামুখীতে পাঠিয়ে দেন। পাথর পৌঁছে দেওয়ার পর টাকার জন্য ফোন করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি বলে অভিযোগ চন্দনের। পরে তিনি জানতে পারেন, বরাত যিনি দেন, সেই ব্যক্তি ওই পাথর স্থানীয় দুই ক্রেতাকে বিক্রি করে পাথরের দাম বাবদ ৯৪ হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছেন।
প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে গত বছর ৮ ডিসেম্বর সোনামুখী থানার দ্বারস্থ হয়ে চন্দন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে প্রথমে পাথরের ক্রেতাদের কাছে পাথরের দাম নিতে আসা ব্যক্তিদের সন্ধান শুরু করে পুলিশ। চিহ্নিত হয় তাঁদের ব্যবহার করা গাড়িটি। পরে ওই গাড়ির দুই চালক বাঁকুড়ার বাসিন্দা পাপাই সূত্রধর ও অনিমেষ রায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃত দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, গাড়ির ওই দুই চালককে সুনীল কুমার হাজরা নামের কোনও এক ব্যক্তি ওই টাকা সংগ্রহ করে দক্ষিণেশ্বরে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছিল। তার জন্য ওই দুই যুবককে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছিলেন সুনীল। সুনীলের সন্ধান শুরু করে পুলিশ। গত ৭ মে নিমতা থানা এলাকা থেকে পেশায় টোটো চালক সুনীলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সুনীলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে। প্রতারণার টাকা দক্ষিণেশ্বরে পাপাই এবং অনিমেষের কাছ থেকে সংগ্রহ করে রায় বাবুর কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করার জন্য সুনীলকে দেওয়া হয়েছিল মোটা অঙ্কের টাকা। সুনীলের থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও নিজস্ব সূত্র কাজে লাগিয়ে এই প্রতারণা চক্রের মাথা রায় বাবুর সন্ধান শুরু করে পুলিশ। বুধবার তাঁকে গ্রেফতার করে করা হয়। ধৃতের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দু’টি মোবাইল ফোন এবং নগদ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ।
বিষ্ণুপুরের এসডিপিও সুপ্রকাশ দাস বলেন, " গত তিন বছর ধরে শিবু মুখোপাধ্যায় একের পর এক এমন প্রতারণা করে গেলেও এই প্রথম সে পুলিশের হাতে ধরা পড়ল। তার জাল শুধু বাঁকুড়া বা বীরভূমেই ছড়িয়ে নেই, রয়েছে এ রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও। কোন কোন প্রতারণার ঘটনায় সে যুক্ত ছিল আমরা তা খতিয়ে দেখছি।’’