বৃহস্পতিবার বেলা সওয়া তিনটে নাগাদ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রয়াত হয়েছেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লেখক প্রফুল্ল রায়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। গত এক বছর ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তবে দু’মাস তিনি কলকাতার লেক গার্ডেনসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানেই তিনি প্রয়াত হন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলার সাহিত্য মহলে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
প্রফুল্ল রায়ের জন্ম ১৯৩৪ সালে তৎকালীন পূর্ব বাংলার ঢাকা জেলায়। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর চলে আসেন ভারতে। এদেশে আসার পর জীবনে স্থিতু হতে তাঁকে সংগ্রাম করতে হয়েছে অনেক। সে সময় তিনি বেশ কিছুকাল নাগাল্যান্ডের আদিবাসীদের মধ্যে বাস করেছিলেন। এই আদিবাসীরা ছিলেন মূলত বিহারের ‘অস্পৃশ্য’ ও আন্দামানের মূল ভূখণ্ডের ছিন্নমূল মানুষ। এঁদের কথা পরবর্তীকালে উঠে এসেছে তাঁর সাহিত্যে। বিশেষ করে এই আদিবাসীদের নিয়ে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘পূর্ব পার্বতী’, তিনি লিখেছিলেন নাগাল্যান্ডে। ১৯৫৭ সালে তা প্রকাশিত হয়েছিল।
এর পরের যে উপন্যাসটি সর্বাধিক বিখ্যাত, তা হল ‘কেয়াপাতার নৌকা’। তাঁর উদ্বাস্তু জীবনের অভিজ্ঞতা ধরা আছে এই কালজয়ী উপন্যাসটিতে। ১৯৬৮-৬৯ সালে কবি মণীন্দ্র রায়ের উদ্যোগে অমৃত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল উপন্যাসটি। পরবর্তীকালে রচিত ‘শতধারায় বয়ে যায়’ এবং ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’ এই উপন্যাসদুটি নামে আলাদা হলেও মূলত এই তিনটি উপন্যাস মিলে একটি ট্রিলজি। উপন্যাস ও ছোট গল্প সহ তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা দেড় শতাধিক। ‘ক্রান্তিকাল’ উপন্যাসের জন্য ২০০৩ সালে তিনি পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার। এর আগে ১৯৮৫ সালে ‘আকাশের নিচে মানুষ’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্কিম পুরস্কার। এছাড়াও ২০০১ সালে ‘মুক্তিযোদ্ধা কাজী ফয়জল’ উপন্যাসের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ভূষিত করেছিল ‘একুশ সাহিত্য পদক’-এ। এছাড়াও পেয়েছেন আরও উল্লেখযোগ্য পুরস্কার।
তাঁর গল্প-উপন্যাস নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রচুর চলচ্চিত্র, টেলিফিল্ম ও টেলিধারাবাহিক। চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘এখানে পিঞ্জর’, ‘বাঘবন্দি খেলা’, ‘আদমি ঔর ঔরত’, ‘চরাচর’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
গত দু-একদিন ধরেই বর্ষার আকাশের মুখ ভার। তার মধ্যেই গাঢ় হয়ে উঠল এক বিষণ্ণতার ছায়া। এই বর্ষায় অনন্তের দিকে ভেসে গেল ‘কেয়াপাতার নৌকা’।