বয়স হয়েছিল প্রায় ৯০ বছর। সারা দেশ ঘুরেছেন একটা সময়ে। শেষ জীবনে ছিলেন কার্যত ঘরকুনো। কোথাও যেতেন না। নাগালের বাইরে ছিলেন সবার। বার্ধক্যজনিত শারীরিক সমস্যাও কাবু করেছিল সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়কে। ডায়াবিটিজ়, স্নায়ুর সমস্যা ছিলই। বৃহস্পতিবার না-ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন মানুষটা। তাঁর বন্ধু ছিলেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। খুব আলাপ না থাকলেও, প্রফুল্লকে তাঁর লেখনীর মাধ্যমে চিনেছিলেন সাহিত্যিক বাণী বসু। এই সময় অনলাইন-এ প্রফুল্ল রায়কে নিয়ে স্মৃতিচারণা করলেন এই দুই প্রখ্যাত লেখক।
শেষ জীবনে বড্ড ঘরবন্দি হয়ে গিয়েছিলেন : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
প্রফুল্ল রায়কে দাদা বলে ডাকতাম। তিনি আমার চেয়ে বয়সে বড় ছিলেন। এক সময়ে আমার খুবই কাছের বন্ধু হয়ে ওঠেন প্রফুল্লদা। পরে আমাদের আর দেখাসাক্ষাৎ হতো না। শেষ দেখা হয় সাউথ সিটিতে। নাতিকে নিয়ে এসেছিলেন। তার পরে শুনলাম, তিনি ঘরবন্দি। কোথাও যেতেন না। বইমেলাতেও আসতেন না। শূন্যতা অনুভব করতাম। আজ সেই শূন্যতা চিরস্থায়ী হয়ে গেল। সাহিত্য জগতের ক্ষতি হয়ে গেল। প্রফুল্লদার লেখার ভক্ত ছিলাম। পূর্ববঙ্গের যে চিত্র তাঁর লেখার মধ্যে দেখেছি, তা অসামান্য। সত্যিই ছবির মতো। তাঁর লেখা ‘পূর্ব পার্বতী’, ‘কেয়াপাতার নৌকো’, সব আমার প্রিয়। শক্তিমান লেখক ছিলেন। তাঁর লেখা থেকে অনেক সিনেমা তৈরি হয়েছে। সিরিয়াল তৈরি হয়েছে। চিত্রনাট্যও লিখেছিলেন। আসলে বহুমুখী মানুষ ছিলেন। আবারও একটাই কথা বলব, শেষ জীবনে ঘরবন্দি হয়ে গেলেন। একা হয়ে গেলেন। অনেক কিছু মনেও রাখতে পারতেন না। মনে হয় স্ত্রীর মৃত্যুর পরই তাঁর এই অবস্থা হয়েছিল।
তাঁর লেখায় সততার ছোঁয়া পেয়েছি: বাণী বসু
প্রফুল্ল রায় চলে গেছেন, এই খবর আপনাদের থেকেই প্রথম পেলাম। মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। চতুর্দিকে মৃত্যুর খবরই পাচ্ছি। কোথাও কি ভালো খবর নেই? প্রফুল্ল রায়ের চলে যাওয়া সাহিত্য জগতের ক্ষতি। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘পূর্ব পার্বতী’ পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। ওঁর লেখার মধ্যে সারল্য খুঁজে পেতাম। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লিখতেন বলেই হয়তো তাঁর লেখায় সততার ছোঁয়া পেয়েছি। এটাই ছিল প্রফুল্ল রায়ের বৈশিষ্ট্য। লেখার মাধ্যমে বোঝাতেন, সংগ্রাম করে কোথাও একটা পৌঁছতে হবে। হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা তিনি বলেননি। তাঁর এই লড়াকু কলমকে আমি কুর্নিশ জানিয়েছি বার বার। আমার সঙ্গে তেমন আলাপ না থাকলেও, লেখা নিয়ে ফোনে কথা বলেছিলাম। সত্যিই খারাপ খবর। মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।