প্রয়াত সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়। তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৯০ বছর। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় দীর্ঘদিন ভুগছিলেন তিনি। ডায়াবিটিজ় ও স্নায়ুর সমস্যা ছিল। বিগত তিন মাস ভর্তি ছিলেন দক্ষিণ কলকাতার একটি নার্সিংহোমে। সেই নার্সিংহোমেই বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রফুল্ল রায়। স্ত্রী মারা গিয়েছেন আগেই। প্রফুল্ল রেখে গেলেন তাঁর দুই মেয়েকে। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বাংলার সাহিত্য জগৎ।
১৯৩৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত বাংলায় জন্ম প্রফুল্ল রায়ের। ছোটবেলা কেটেছে ঢাকায়। দেশভাগও চাক্ষুষ করেছেন। এ পার বাংলায় এসে নতুন করে লড়াই শুরু করেছিলেন প্রফুল্ল ও তাঁর পরিবার। এক জায়গায় বেশি দিন থাকতে পারতেন না প্রফুল্ল। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন। মানুষের সংগ্রামকে খুব কাছ থেকে দেখার খিদে তাঁকে তাড়া করে বেরিয়েছে আজীবন। সংগ্রামের সেই আঁচ অনুভব করতে থেকেছেন নাগাল্যান্ডের আদিবাসী গ্রামে। বিহারের অস্পৃশ্যদের হাহাকারে ফেলেছেন চোখের জল। আন্দামানের স্থানীয়দের দুর্দশা বিচলিত করে তুলেছিল প্রফুল্লকে। আর সে সবই তিনি তুলে ধরেছিলেন তাঁর লেখনীতে। লেখকের সবচেয়ে বড় অস্ত্র তাঁর কলম। সেই অস্ত্রকে পাথেয় করেই প্রায় ৯০ বছরের পথ পার বিদগ্ধ মানুষটির। তাঁর সেই কলম এ বার পূর্ণচ্ছেদ বসালো জীবনের যাত্রাপথে।
মানুষের মন সহজেই বুঝতে পারতেন প্রফুল্ল। বাস্তবের খুব কাছাকাছি ছিল তাঁর গল্পের চরিত্রেরা। ফলে গ্রাম এবং শহর – দু’জায়গার মানুষই তাঁর লেখনীর ভক্ত হয়ে ওঠেন। ১৯৫৬ সালে নাগাল্যান্ডে বসে লিখেছিলেন তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘পূর্ব পার্বতী’। উদ্বাস্তু মানুষের জীবনযুদ্ধের চিত্র পাওয়া যায় তাঁর লেখা ‘কেয়াপাতার নৌকো’, ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’, ‘নোনা জল মিঠে মাটি’-তে।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছিলেন বলে, প্রফুল্লর গল্প সহজেই চিত্রনাট্যের রূপ নিতে পেরেছে। আর সেই কারণেই সিনেমা ও টেলিফিল্ম নির্মাতাদের কাছে হতে পেরেছেন চাহিদার লেখক। ‘এখানে পিঞ্জর’, ‘বাঘ বন্দি খেলা’, ‘একান্ত আপন’, ‘চরাচর’, ‘টার্গেট’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘ক্রান্তিকাল’, ‘পিতৃভূমি’র গল্প অবলম্বনে তৈরি হয়েছে সিনেমা-সিরিয়াল-টেলিফিল্ম। টিভির অন্যতম জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘কেয়াপাতার নৌকো’ তৈরি হয়েছে তাঁরই লেখা গল্প থেকে।