• ১ আগস্ট থেকে রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ চালুর নির্দেশ হাইকোর্টের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৯ জুন ২০২৫
  • চলতি বছরের ১ আগস্ট থেকে রাজ্যে মহাত্মা গান্ধী রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিম অর্থাৎ ১০০ দিনের কাজ শুরু করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে এই নির্দেশই দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায় দাসের ডিভিশন বেঞ্চে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল। এই বেঞ্চই কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্যে ১০০ দিনের প্রকল্প চালু করার নির্দেশ দিয়েছে। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্পকে অনন্তকালের জন্য ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া যায় না।

    দুর্নীতির অভিযোগে গত তিন বছর ধরে রাজ্যে বন্ধ রয়েছে ১০০ দিনের কাজ। কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা আটকে রেখেছে। কিন্তু দুর্নীতির ঘটনায় যুক্ত কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি কেন্দ্র বা রাজ্য। এরপরও কেন্দ্রের তরফে টাকা বন্ধ করে দেওয়ায় রাজ্যে তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ১০০ দিনের কাজ। এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, দুর্নীতি রুখতে রাজ্য সরকারকে যে কোনও শর্ত দিতে পারবে কেন্দ্র। তবে ১০০ দিনের কাজ ফের শুরু করতে হবে। সমগ্র প্রকল্পটি বন্ধ করে রাখা যাবে না। পাশাপাশি আগে যে টাকা উদ্ধার হয়েছিল, সেই টাকা কেন্দ্রের কনসোলিডেটেড ফান্ডে আপাতত রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত । পরে সেখান থেকে কীভাবে টাকা বিলি করা হবে তা কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে।

    কেন্দ্রের দেওয়া ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। এই অভিযোগের তদন্তে রাজ্যে এসেছিলে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। এই দল হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, মালদহ এবং দার্জিলিং জেলায় ৫০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল। এ দিন প্রধানবিচারপতির বেঞ্চের আরও পর্যবেক্ষণ, যাঁরা ১০০ দিনের কাজ করতে পারছেন না বা কাজ করেও প্রাপ্য টাকা পাচ্ছেন না, তাঁদের ভুগতে হবে কেন? কাজ কেন আটকে থাকবে? প্রয়োজনে যে চার জেলায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে, সেই জেলা বাদ দিয়ে বাকি জেলায় ১০০ দিনের কাজ চালু হোক। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প। এই প্রকল্পের পুরো টাকাই সরাসরি শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। তাই জনগণের স্বার্থে রাজ্যে এই প্রকল্প চালু হওয়া দরকার। পাশাপাশি আদালত জানিয়েছে, ১০০ দিনের কাজের জন্য বরাদ্দ টাকা কোথায় কীভাবে খরচ হচ্ছে তা দেখার ক্ষমতা কেন্দ্রের রয়েছে। সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে কেন্দ্র প্রকল্পের দিকে নজর রাখুক। কিন্তু এই কাজ চালু রাখতে হবে। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কেন্দ্রীয় কোনও পোর্টালের মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাতে শিলমোহর দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট ।

    রাজ্যে ১০০ দিনের কাজে নিয়ে অভিযোগ ওঠে, প্রকৃত জব কার্ড হোল্ডারদের অধিকাংশই এই প্রকল্পের সুবিধা পাননি। মৃত ব্যক্তিদের নামেও টাকা নেওয়া থেকে শুরু করে নকল বাঁধ তৈরি করেও টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগের তদন্তে রাজ্যে দল পাঠায় কেন্দ্র। ২০২৪ সালে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, ১০০ দিনের কাজে কেন্দ্রীয় দল ৬১৩ কোটি টাকার অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে। তার মধ্যে রাজ্য ২১০.৩৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে। পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, মালদা এবং দার্জিলিংয়ে সব থেকে বেশি দুর্নীতি হয়েছে। উদ্ধার হওয়া অর্থ প্রকৃত প্রাপকদের দ্রুত বণ্টনের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। এবার ১ আগস্ট থেকে রাজ্যে ১০০ দিনের প্রকল্প চালুর নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।

    হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, এই রায়ের পর তৃণমূলের দাবিই মান্যতা পেল। কেন্দ্রীয় সরকার বেআইনিভাবে বৈষম্যমূলকভাবে, প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে রাজ্যের টাকা আটকে রেখেছিল।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)