সম্প্রতি বিধানসভায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে, বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলায় কথা বললেই ভারতীয় বাঙালিদেরও বাংলাদেশি তকমা দিয়ে দেশছাড়া করা হচ্ছে। মাত্র একদিন আগেই এরকম তিনজন পরিযায়ী বাঙালি শ্রমিককে জোর করে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁদের পশ্চিমবঙ্গে ফেরানো সম্ভব হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এদেশের বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর এই ধরনের নানান হেনস্থা চলছে। তাই বাংলা বললেই বাংলাদেশি তকমা দিয়ে সন্দেহ করে হেনস্থা করার ঘটনায় ও অভিযোগে সরব গোটা দেশ। বিশেষ করে মুর্শিদাবাদ ও মালদহের শ্রমিকরা এই ধরনের হেনস্থার শিকার বেশি হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব ক্ষেত্রে পরিচয়পত্র দেখালেও তাঁরা ছাড় পাচ্ছেন না।
ইতিমধ্যেই ওড়িশা, মহারাষ্ট্র সহ বিভিন্ন রাজ্যে মুর্শিদাবাদের শ্রমিকদের ভারতীয় পরিচয় দেখানো সত্ত্বেও হেনস্থা হওয়ার একশোটিরও বেশি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু তাতে লাভ বিশেষ হয় না। অন্য রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে তাই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে এইসব বাঙালি শ্রমিক নিজের রাজ্যে ফিরে আসছেন। আর তাই, এই হেনস্থার হাত থেকে বাঁচতে তাঁরা হিন্দি শেখার উপর জোর দিচ্ছেন। তাঁরা মনে করছেন, স্পষ্ট হিন্দি উচ্চারণে কথা বলতে পারাই এই হেনস্থা থেকে বাঁচার একমাত্র পথ। আর তাই, দিনের শেষে কাজ করে ফেরার পর তাঁদের বস্তিতে হিন্দি শেখার উদ্যোগ চলেছে। হিন্দিভাষী ঠিকাদারেরাই এইসব বাঙালি শ্রমিককে হিন্দি শেখাচ্ছে।
পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্যমঞ্চের প্রধান আসিফ ফারুক বাঙালি শ্রমিকদের হেনস্থার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘আধার, পানকার্ড সহ একাধিক পরিচয়পত্র দেখিয়েও এই হেনস্থার হাত থেকে বাঁচা যাচ্ছে না। শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিক হয়েও শুধুমাত্র ভাষা ও ধর্মের ভিত্তিতে বাঙালি শ্রমিকদের বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।’
ওড়িশায় ফেরিওয়ালার কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদের প্রায় ৩০ জন বাঙালি পরিযায়ীকে বাংলায় কথা বলার ‘অপরাধে’ অবৈধ বাংলাদেশি বলে হেনস্থা করা হয়। ওড়িশাতে ৬০ জন পরিযায়ী শ্রমিক জশিপুরে কাজ করতে গেলে তাঁদের সন্দেহের শিকার হতে হয়। উত্তরপ্রদেশে মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু শ্রমিককে বাংলাদেশি বলে সেখানকার স্থানীয় লোকজন মারধর করে। সর্বত্রই মূলত বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্যই তাঁদের সন্দেহ করা হচ্ছে।
তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম দাবি করেছেন, বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের এবার দায়িত্ব নিতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে। পরিযায়ী শ্রমিকদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। যদিও পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল ও বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
পরিযায়ী শ্রমিকরা জানাচ্ছেন, এর আগেও তো আমরা ভিন রাজ্যে কাজ করেছি। তখন হিন্দি না জানার জন্য এমন হেনস্থার শিকার হতে হয়নি। এখন তাঁরা মনে করছেন, হিন্দি শিখলেই হয়তো হেনস্থার হাত থেকে বাঁচা যাবে।