মহম্মদ মহসিন
বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল, সরকার বাসের ভাড়া বাড়ায়নি। তা নিয়ে মাঝে মধ্যেই আক্ষেপ করে থাকেন বাস মালিকরা। ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে রাজ্যে একাধিক বার বাস ধর্মঘট হয়েছে। তাতেও কর্ণপাত করেনি সরকার।
উল্টে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, বাসভাড়া বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের উপরে নতুন করে কোনও আর্থিক বোঝা চাপাতে নারাজ তিনি।
সরকার কিংবা বাস মালিকরা যে ব্যাখ্যাই দিক না কেন, যাত্রীদের অভিজ্ঞতা কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে। অনেকেই অভিযোগ করছেন, সরকার ভাড়া না বাড়ালেও বাসে যাতায়াত করতে আগের থেকে অনেক বেশি টাকা খরচ হচ্ছে।
সরকার ভাড়া বেঁধে না দেওয়ায় ইচ্ছা মতো যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছেন কন্ডাক্টররা। ফলে সরকার বাসের ভাড়া না বাড়ালেও আখেরে যাত্রীদের বিশেষ কোনও উপকার হচ্ছে না।
গত কয়েক বছরে জেলার দিকে বাসের ভাড়া কী হারে বেড়েছে, একটা উদাহরণ দিলেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। করোনার আগে হাওড়া গ্রামীণ জেলার বাগনান–শ্যামপুর রুটে ন্যূনতম বাসভাড়া ছিল ৭ টাকা। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ১০ টাকা।
বাগনান থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত যেতে ভাড়া লাগত ১৪ টাকা এবং বাগনান থেকে গাদিয়াড়ার ভাড়া ছিল ২০ টাকা। এখন বাগনান থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত যেতে ভাড়া লাগছে ৩০ টাকা। আর বাগনান থেকে গাদিয়াড়া যেতে ভাড়া গুণতে হচ্ছে ৪০ টাকা।
আগে বাগনান থেকে আমতার ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। বর্তমানে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ টাকা। বাগনান থেকে জয়পুর ভায়া খালনা পর্যন্ত আগে ভাড়া ছিল ১৯ টাকা। বর্তমানে সেটা বেড়ে হয়েছে ২৫ টাকা। আমতা থেকে সাঁকরাইল পর্যন্ত বাসের ভাড়া ছিল ১৯ টাকা।
এখন ২২ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। উলুবেড়িয়া থেকে আমতার ভাড়া ছিল ২০ টাকা। সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ টাকা। অর্থাৎ, সরকার ঘোষণা না করলেও গড়ে প্রায় ৫-৬ টাকা বাসের ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে যাতায়াতের খরচ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।
যাত্রীরা অভিযোগ করছেন, বাসের কন্ডাক্টররা যাত্রীদের কাছ থেকে বা়ডতি ভা়ডা আদায় করলেও তার কোনও ‘ফেয়ার চার্ট’ বা তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, রিজওনাল ট্রান্সপোর্ট অথিরিটি’র স্বাক্ষর করা ভাড়ার তালিকা বাসে টাঙিয়ে রাখতে হয়।
তাতে স্টেজ অনুযায়ী ভাড়ার পরিমাণ লেখা থাকে। তাতে যাত্রীদের বুঝতে সুবিধা হয়। বাস মালিকরা নিজেদের মর্জি মতো ভাড়া বাড়ালেও তার কোনও তালিকা প্রকাশ করেননি। ফলে লোকজন জানতেই পারছেন না, সঠিক ভাড়াটা কত।
শ্যামপুর থানা নাগরিক ফোরামের সম্পাদক উত্তম রায়চৌধুরী বলেন, ‘বাসের ভাড়া লাগামছাড়া হয়ে গিয়েছে। যাত্রীদের কাছ থেকে যেমন খুশি ইচ্ছা ভাড়া চাইছে। কোথাও কোথাও ভা়ডা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনও এ ব্যাপারে নির্বিকার। এই যে বাস মালিকরা নিজেরাই ভাড়া বাড়িয়ে দিল, তার অনুমতি কে দিয়েছে?’
হাওড়া জেলা বাস মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক গোপাল পালের অবশ্য দাবি, যাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের পর থেকে রাজ্য সরকার কোনও ভাড়া বা়ডায়নি। এর মধ্যে একাধিক বার তেলের দাম বেড়েছে। অন্যান্য খরচ-খরচা বেড়েছে। এই অবস্থায় ভা়ডা না বাড়লে চলবে কী করে?’
হাওড়া গ্রামীণ জেলা বাস মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অসিত পণ্ডিত বলেন, ‘সমস্ত রুটে বেআইনি টোটো এবং অটোর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাসে আগের মতো প্যাসেঞ্জার হচ্ছে না। যে সামান্য ভা়ডা বেড়েছে, তা দিয়ে লোকসান সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।’
বাগনান-মানপুর-বাকসি প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের সরকারি সম্পাদক শেখ বাগবুল ইসলাম বলেন, ‘বাস কমে যাওয়ায় আমরা অটো কিংবা টোটোয় উঠতে বাধ্য হচ্ছি। স্টপেজ অনুযায়ী অটো ও টোটোর ভা়ডা নির্দিষ্ট করা আছে। দিনের বেলায় তারা সেটা মেনে চলেন। কিন্তু রাতের দিকে কেউ কেউ ইচ্ছা মতো ভাড়া চায়। যাত্রীরাও বাধ্য হয় দিতে।’