• ফুঁসছে একাধিক নদী, লাগাতার বৃষ্টিতে ডুবেছে সিমলাপাল সেতু, গড়বেতায় বন্যা পরিস্থিতি
    এই সময় | ১৯ জুন ২০২৫
  • সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে মঙ্গলবার থেকেই লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে বাঁকুড়া জেলায়। আর তার জেরেই ডুবলো বাঁকুড়া ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়কে শিলাবতী নদীর উপরে সিমলাপাল সেতু। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সেতুর উপর দিয়ে জল বইতে শুরু করে। ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বাঁকুড়া ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়কে। সেতু পারাপার করতে গিয়ে জলের আটকে যায় তিনটি ট্রাক। ট্রাকে থাকা লোকজনকে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করেন। ভারী বর্ষণে শিলাবতী নদীর জলে ডুবেছে ভেলাইডিহা সেতুও।

    অন্যদিকে, টানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায়। ইতিমধ্যেই, শিলাবতী নদীর জলে প্লাবিত গড়বেতা-১ নং ব্লকের ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং গড়বেতা-২ নং ব্লকের ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত। বন্যা পরিস্থিতি চন্দ্রকোনা-সহ ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন এলাকায়।

    পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ জানিয়েছেন, কয়েক হাজার দুর্গত মানুষকে নিরাপদ স্থানে বা ত্রাণ শিবিরে সরানো হচ্ছে। গড়বেতা-২ নং ব্লকের সারবত, জোগারডাঙ্গা ও পিয়াশালা অঞ্চলও জলের তলায় বলে জানিয়েছেন বিডিও দেবঋষি বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অঞ্চলগুলির বন্যাদুর্গতদের ফ্লাড সেন্টার বা ত্রাণ শিবিরে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ফ্লাড সেন্টারগুলিতে পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

    বৃহস্পতিবার গড়বেতা-২নং পঞ্চায়েত সমিতির সভপতি দীনবন্ধু দে এই সময় অনলাইন-কে বলেন, ‘তিনটি অঞ্চলের শতাধিক পরিবারকে নিরাপদ স্থানে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে, পলাশিয়া অঞ্চলের পাথরবেড়িয়া নদীঘাটের কাছে একটি বাড়ির লোকজনকে এখনও উদ্ধার করা যায়নি।’ ব্লকের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা দ্রুত উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।

    এদিকে, জলের তোড়ে গড়বেতার দু'টি (১ ও ২নং) ব্লকের একাধিক রাস্তা ও সেতু ভেঙে গেছে বলে স্থানীয় এবং প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। কয়েক হাজার মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শিলাবতী নদীর জলের তোড়ে গড়বেতার মায়তা থেকে গোয়ালতোড় হয়ে বাঁকুড়া যাওয়ার পাকা রাস্তাটি ভেঙে গেছে। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তাছাড়াও, শিলাবতী নদী তীরবর্তী কয়েকশ বিঘা জমি জলের তলায় চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

    শালবনীতেও ফুঁসছে তমাল নদী। শালবনীর আউলারা এলাকায় একটি বাঁশের সেতু ভেঙে পড়েছে। শালবনীর বিডিও রোমান মন্ডল এবং গড়বেতা ৩নং ব্লকের বিডিও দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "এখনও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। তবে পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছি। জেলা কন্ট্রোল রুমের সাথেও যোগাযোগ আছে।"

    প্রবল বৃষ্টিতে চন্দ্রকোনাতে শিলাবতী নদী ছাড়াও ফুলে ফেঁপে উঠেছে কেঠিয়া ও কানা নদীও। নদীর দুর্বল বাঁধের বেহাল অবস্থা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় মানুষজন। যে কোন মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে নদী বাঁধ।

    জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেছেন, 'গড়বেতার দু'টি ব্লকে মোট ৯টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র কার্যত জলের তলায়। স্বাস্থ্যকর্মীরা পৌঁছতে পারছেন না। আমরা প্রশাসনের কাছ থেকে নৌকা চেয়েছি। তবে, প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ফ্লাড সেন্টারে পর্যাপ্ত ওষুধের যোগান রয়েছে।' তবে শিলাবতী নদীর জল আরও বাড়লে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালও জলের তলায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

    অন্যদিকে, জেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিডিও এবং ব্লক স্বাস্থ্য অধিকারিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি। দুর্গত এলাকাগুলিতে ত্রাণ শিবিরও চালু করা হয়েছে ইতিমধ্যে। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া দুর্গতদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন জেলাশাসক।

    ২ দিন দেরিতে হলেও রাজ্যে প্রবেশ করেছে বর্ষা। তার জেরেই গত কয়েকদিন ধরেই লাগাতার বৃষ্টি হয়ে চলেছে গাঙ্গেয় বঙ্গে। আবহাওয়া দপ্তরের তরফ থেকে দক্ষিণের জেলাগুলিতে জারি হয়েছে লাল সতর্কতা। দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছে সাধারণ মানুষের।

  • Link to this news (এই সময়)