রক্ত ও কিডনির রোগে আক্রান্ত বালিকা, প্লাজ়মা থেরাপিতে সুস্থ
আনন্দবাজার | ১৯ জুন ২০২৫
বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছিল সাত বছরের বালিকা। শরীরে লোহিত রক্তকণিকা ক্রমশ ভেঙে যাচ্ছিল, কমছিল কিডনির কার্যক্ষমতা। সেই বালিকাকে প্রায় ৫০ দিন ভর্তি রেখে ২১ বার প্লাজ়মা থেরাপি ও কয়েক বার ডায়ালিসিস করে সুস্থ করল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আপাতত প্রাণের ঝুঁকি কেটেছে আমতার ওই বালিকার।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, দীর্ঘ দিন ধরেই ক্রমশ ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছিল আমতার শিবাঙ্গী দলুই। প্রস্রাবের পরিমাণও কমে গিয়েছিল। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এলে পরীক্ষায় ধরা পড়ে, সে ‘হিমোলাইটিক ইউরেমিক সিন্ড্রোম’ (এইচইউএস)-এ আক্রান্ত। মাসকয়েক আগে শিবাঙ্গীকে কলকাতা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছিল। বেশ কিছু দিন চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছিল সে। কিন্তু পুনরায় রোগটি ফিরে আসে বলে জানাচ্ছেন ওই হাসপাতালের শিশুরোগ চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘ওই শিশু অ্যাটিপিকাল-এইচইউএস আক্রান্ত ছিল। তবে, এর আগে একই অসুখে আক্রান্ত আরও আটটি শিশুর চিকিৎসা করা হয়েছে। কিন্তু কারও ক্ষেত্রেই রোগটি ফিরে আসেনি।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাক্টিরিয়া সংক্রমণের পরে কেউ ‘এইচইউএস’-এর মতো প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হয়। সব থেকে বেশি ‘ই-কোলাই’ ব্যাক্টিরিয়াই এই বিরল রোগের জন্য দায়ী বলে মত চিকিৎসকদের। অ্যাটিপিকাল- এইচইউএসের ক্ষেত্রে রক্তকণিকা ভেঙে যায় এবং রক্তনালিতে ছোট ছোট আকারে রক্ত জমাট বাঁধতে থাকে। তাতে কিডনি ক্রমশ অকেজো হয়ে পড়ে। জানা যাচ্ছে, আচমকা প্রবল খিঁচুনি শুরু হয়েছিল শিবাঙ্গীর। প্রস্রাব প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, শরীর ফুলে যাচ্ছিল এবং রক্তচাপ ক্রমশ বাড়ছিল। তড়িঘড়ি তাকে কলকাতা মেডিক্যালে নিয়ে আসেন পরিজনেরা। পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, ফের ‘অ্যাটিপিকাল-এইচইউএস’ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ওই শিশু। তখন তাকে পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। দিব্যেন্দু-সহ চিকিৎসক মৌমিতা সামন্ত, মিহির সরকারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা শুরু হয়।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, শিবাঙ্গীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় পাঁচ দিন তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। পাশাপাশি, প্লাজ়মা থেরাপি শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। সেই মতো ২১ বার ওই থেরাপি দেওয়া হয়। কিডনির কার্যক্ষমতা ফেরাতে তিন বার ডায়ালিসিস করা হয়। তার পরে ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে শিবাঙ্গীর। রক্তে লোহিত কণিকার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। প্রস্রাবের পরিমাণও বাড়তে থাকে। দিব্যেন্দু বলেন, ‘‘সুস্থতার পরেও কিছু দিন ওই বালিকাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। তার পরে ছুটি দেওয়া হয়। সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা না হলে বড় বিপদ ঘটত।’’