এই সময়: দশক পেরিয়েছে। পার হয়েছে চার-চারটি যুগও। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সময়ে ১৯৭৫ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল। তার ৫০-তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ২৫ জুন তারিখটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
রাজ্যগুলিও ওই দিনে তাদের ঠিক করে দেওয়া কর্মসূচি পালন করুক, এমনটাই চায় কেন্দ্র। সেই মর্মে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রের সংস্কৃতি মন্ত্রকের সচিব বিবেক আগরওয়াল।
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিলেন, বাংলা এই কর্মসূচি পালন করবে না। বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁরা সংবিধান বদলে দিচ্ছেন, রোজ গণতন্ত্রকে হত্যা করছেন, তাঁদের মুখে এ সব কথা মানায় না।’ তবে জরুরি অবস্থা জারির সিদ্ধান্ত যে তিনি সমর্থন করেন না, তা–ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে ইমার্জেন্সি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মমতার প্রশ্ন, ‘জরুরি অবস্থার ৫০ বছর তো ২০২৪ সালেই হয়ে গিয়েছে। ২০২৫ সালে কেন সেই দিবস পালন করা হচ্ছে? এর নেপথ্যে রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নেই।’
এর পরেই বিজেপিকে নিশানা করে মমতার মন্তব্য, ‘দেশে সংবিধান রোজ বদলানো হচ্ছে। পরিকল্পিত ভাবে ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ সুর আরও চড়িয়ে তাঁর সংযোজন, ‘আপনাদের ধর্ম ফেক। আপনারা ফেক ধার্মিক।’
জরুরি অবস্থা জারি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইমার্জেন্সি মানুষ মেনে নেয়নি। মানুষের অসুবিধা হয়েছিল। পালন করতে হলে দিনটিকে তো অন্য ভাবে, ভিন্ন নামেও পালন করা যেত।’
এমন শব্দবন্ধ ব্যবহার নিয়ে মমতা বলেন, ‘এই সংবিধান হত্যা কথাটায় আমার আপত্তি আছে। গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলোকে বিজেপি রোজ ধ্বংস করে চলেছে। ফলে ওরা ওদের মতো পালন করুক, আমরা আমাদের মতো পালন করছি না।
কারণ, আমাদের মতো করে পালন করতে হলে প্রতিদিন গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করতে হবে।’ জরুরি অবস্থায় যে ভাবে সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল, বর্তমানে সে ভাবেই খবর ছাপতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর।
এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মমতা তুলে আনেন নোটবন্দির কথা। সেই দিনটিকে ‘ব্ল্যাক মানি ডে’ বলে ঘোষণার দাবি তুলেছেন মমতা। নিজের দাবির সপক্ষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর নোটবন্দির সময়েই গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে।
কত মানুষকে কত দিন ধরে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে নোট বদলানোর জন্য! ১৪০ জন মানুষ মারা গিয়েছেন! পহেলগামের পরে এখনও সর্বদল বৈঠক ডাকা হলো না।’ সোমবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পহেলগাম ইস্যুতে কেন্দ্রের কাছে যে পাঁচটি প্রশ্ন তুলে ধরেছিলেন, এখনও কেন নরেন্দ্র মোদী সরকার তার জবাব দিল না, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
এর পরেই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের প্রাইম মিনিস্টার কে? মোদী না শাহ? মোদী তো বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আর বকলমে তো দেশটা ওঁকে (পড়ুন অমিত শাহ) ছেড়ে দিয়েছেন।
তিনি কোনও নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না, ওঁরা আবার গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করতে চাইছেন?’
মমতাকে পাল্টা বিঁধে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘ইমার্জেন্সি ডে বিজেপির পক্ষ থেকে, রাষ্ট্রবাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গে পালন করা হয়।
এ বারেও পালন করা হবে। রাজ্যে ইমার্জেন্সির সময়ে যাঁরা জেল খেটেছেন, তাঁদের আমরা সংবর্ধনা দিই, এ বারেও দেবো। উনি (মুখ্যমন্ত্রী) পালন করলেন, কী না করলেন, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।’