• প্রায় ৬০ ঘণ্টা নির্জলা, খাবার পেতে ১০ হাজার অফার!
    এই সময় | ১৯ জুন ২০২৫
  • এই সময়, ময়নাগুড়ি: শুধু ময়নাগুড়ির বোলবাড়ি এটিএম নয়, এখনও পর্যন্ত ৭৫টি এটিএম লুট করেছেন ধৃত ৪ দুষ্কৃতী। ময়নাগুড়ির এটিএম লুট করার আগে ১ লক্ষ ২৬ হাজার টাকার সরঞ্জাম কিনেছিলেন।

    টানা পুলিশি জেরায় এমনটাই জানিয়েছেন ধৃত আসলুফরা। তাঁরা স্বীকার করেছেন, শহরের বড় রাস্তা দিয়েই শিলিগুড়ি থেকে নেপালে পালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। পুলিশ পিছু ধাওয়া করায় সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

    উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না এটিএম লুটেরাদের। পুলিশের তাড়া খেয়ে জঙ্গলের মাঝে আত্মগোপন করা কাল হয়েছে তাঁদের। একে তো বৈকুন্ঠপুরের গহন অরণ্য। তার উপরে হাতি, বাইসন-সহ বন্যপ্রাণীর ভয়।

    এক কথায় জঙ্গলে ঢুকে কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন আসলুফ, সামসের, ইরফান, নরেশ, সোনুরা। জঙ্গলের অজানা পথ খুজতে গুগল ম্যাপের সাহায্য নিয়েও কুলকিনারা পাননি। টানা চার দিন সার্চ অপারেশন চালিয়ে বুধবার থানায় ফিরেছেন ময়নাগুড়ি থানার আইসি সুবল ঘোষ।

    তাঁর কথায়, ‘চতুর্থ অভিযুক্ত নরেশ ধরা পড়েন খুব বিধ্বস্ত অবস্থায়। আর কিছুক্ষণ জঙ্গলে থাকলে তিনিও পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতেন বলে স্বীকার করেছেন।’

    কেন? আই সি বলেন, ‘দু’দিনের বেশি নির্জলা, অভুক্ত থাকার পরে এক জন বাইরে বেরিয়ে এসে স্থানীয় একজনকে খাবারের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য দশ হাজার টাকার অফার করেছিলেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি রাজি না-হয়ে গোপনে পুলিশকে জানিয়ে দেয়। তাতেই নরেশ ধরা পড়ে।’

    জানা গিয়েছে, দুষ্কৃতীদের ধরতে পুলিশ মাথাপিছু ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করায় গ্রামের ছেলেরা উৎসাহ নিয়ে খুঁজতে শুরু করে। অনেকের মোটরবাইকে পুলিশ তেলও ভরে দেয়।

    আসলুফদের মতো জঙ্গলের ভিতরে তল্লাশি চালাতে পুলিশকেও কঠিন পরিস্থিতি সামনে করতে হয়। পটকা ফাটিয়ে সামনে আসা বাইসন, লেপার্ডদের সরিয়ে দিয়েছেন বনকর্মীরা। প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার জঙ্গলের ভিতরে তল্লাশিতে বাধ সাধে মুষলধারে বৃষ্টি।

    আনা হয় থার্মাল ড্রোন। সোমবার বিকেলে চতুর্থ দুষ্কৃতী নরেশ কোহলি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। কিন্তু তাঁকে ধরার পরেও বিপাকে পড়েন পুলিশকর্মীরা। কারণ, চারিদিকেই জঙ্গল।

    কোন পথে বেরিয়ে আসবেন ঠাহর করতে পারছিলেন না পুলিশকর্মীরা। তাঁরা লাইভ লোকেশন পাঠান বন দপ্তরের আধিকারিকদের। সেই লোকেশন দেখে বনকর্মীদের সাহায্যে জঙ্গলের বাইরে বেরিয়ে আসেন তাঁরা।

    শুক্রবার রাতে এটিএম লুটের পরে তাঁদের ধরতে সমস্ত থানায় খবর পাঠিয়ে দিয়েছিল জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি থানা। পুলিশ আগেভাগে গাড়ির নম্বর পেয়ে যাওয়ায় নাকা চেকিংয়ে ওই নম্বর ধরে গাড়ি খুঁজতে শুরু করে।

    রাজগঞ্জ টোল প্লাজার কাছে দুষ্কৃতীরা পুলিশের পরিকল্পনা টের পেতেই গাড়ি ঘুরিয়ে জলপাইগুড়ি-রাজগঞ্জের মাঝামাঝি একটি পকেট রাস্তায় গাড়ি ঢুকিয়ে দেয়। সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাঁরা গাড়ির নম্বর প্লেট বদলে দেয়।

    প্রথমে ওয়েস্ট বেঙ্গল নম্বরের গাড়ি থাকলেও পরে তাঁরা সেই গাড়িতে অসমের নম্বর প্লেট লাগিয়ে বোদাগঞ্জের দিকে ঢুকে তিস্তা ক্যানালের রাস্তা দিয়ে পালাতে যায়। পুলিশ ওই রাস্তা ঘিরে ফেলায় তাঁরা ভোরের আলো থানার গেটবাজার এলাকায় গাড়ি ফেলে বৈকুন্ঠপুর জঙ্গলে ঢুকে পড়ে।

    পরে পুলিশ ফেলে দেওয়া গাড়ি সার্চ করার সময়ে পাল্টে ফেলা নম্বর প্লেট–সহ আরও দু’টি ভুয়ো নম্বর প্লেট উদ্ধার করে। বনকর্মীদের সহযোগিতা নিয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করে নরম মাটিতে পায়ের ছাপ দেখতে পান।

    ২০০ মিটার যেতেই একটি রুমাল উদ্ধার হয়। ওই রুমাল দিয়ে দুষ্কৃতীদের একজন এটিএম কাটার সময়ে মুখ ঢেকে রেখেছিলেন। বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পরে ভোরের আলো ফুটে যায়। ততক্ষণে আরও পুলিশকর্মী, বনকর্মীরা এসে সার্চ অপারেশনে যোগ দেন। ক্রমশ গভীর অরণ্যে প্রবেশ করতে থাকে পুলিশ ও বনকর্মীদের দলটি।

  • Link to this news (এই সময়)