• নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠক
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৯ জুন ২০২৫
  • বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি বেশ কয়েকটি প্রসঙ্গ তুলে সে প্রসঙ্গে রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করেন।

    রাজ্যের নতুন ওবিসি বিজ্ঞপ্তির উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা চূড়ান্ত নির্দেশ নয়। কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলাম আমরা। আমরা আদালতের নির্দেশ মেনেই কাজ করেছি। সিপিএম এবং বিজেপি চায় না যে, ওবিসি সংরক্ষণ হোক। কারণ এটা তো গরিব মানুষের জন্য। যাঁরা সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়েছেন, এটা তাঁদের জন্য। তাঁদের অধিকার আমরা কাড়তে পারি না।

    বুধবারই কলকাতা হাইকোর্ট একশো দিনের কাজ ফের চালু করতে কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘রাজ্য এই পিটিশন রিভিউ করবে। কেন্দ্রের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা বাংলায় দল পাকাচ্ছেন। আগে টাকা দিন। চার বছর হয়ে গেল, একটা পয়সাও দিচ্ছেন না।’

    মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, শ্রমিকদের বকেয়া টাকা রাজ্য সরকার নিজে থেকে দিয়েছে, সেই টাকা তিনি ফেরত চাইবেন। তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট ১ আগস্ট থেকে কাজ শুরু করতে বলেছে। কিন্তু গত চার বছর ধরে কোনও কাজ হয়নি। কোনও টাকাও দেওয়া হয়নি। আমাদের নেতারা দিল্লিতে গিয়ে ধর্না দিয়েছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেখায় করেননি। অনেক অপমান করা হয়েছে আমাদের। টাকা আমরা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দিয়েছি। আমাদের সে টাকা, আমাদের ফেরত দিতে হবে। যেদিন থেকে এই কাজ বন্ধ করা হয়েছে, সেদিন থেকেই হিসেব করে টাকা দিতে হবে। আমাদের টাকা কেন অন্য রাজ্যকে দেওয়া হয়েছে? এটা অপরাধ।

    কেন্দ্র সমান্তরাল প্রশাসন তৈরির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রাজ্যের সরকার নির্বাচিত, আর রাজ্যপাল মনোনীত। অমিত শাহকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি কিছু করলে আপনারা সেটা মেনে নেবেন?’ কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘রেল, প্লেন সব তো বিক্রি করে দিয়েছেন। দেশটাকেই বেঁচে দিয়েছেন। মানুষ এর উত্তর দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। আমাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করার জন্য ধিক্কার জানাচ্ছি।

    মুখ্যমন্ত্রী ২০ জুনকে ‘বাংলা দিবস’ হিসেবে পালন করার তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। ২০ জুন ‘বাংলা দিবস’ পালন করা হবে বলে উত্তরপ্রদেশের বিশেষ সচিব পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি দপ্তরকে চিঠি দিয়েছেন। মমতার প্রশ্ন, কে এই তারিখ ঠিক করে দিল? বাংলা ভারতের সঙ্গে থাকবে, আর বাংলাদেশ যাবে পাকিস্তানের সঙ্গে– এই মর্মে একটা আইন পাশ হয়েছিল। তার দু’মাস পর দেশ স্বাধীন হয়েছিল ১৫ আগস্ট।  ‘বাংলার প্রতিষ্ঠা দিবস’ আপনারা ঠিক করে দেওয়ার কে? বিজেপি ইচ্ছেমতো এটা চাপিয়ে দেবে? এটাকে বাংলার চরম অসম্মান বলে মনে করছি। ‘বাংলা দিবস’ পালন করবে বাংলার সরকার। আর সেটা ১ বৈশাখ।

    এদিন পহেলগাম কাণ্ড নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পহেলগাম হামলার পর পার্লামেন্টে বিশেষ অধিবেশনের দাবি জানানো হয়েছিল। আমাদের দল থেকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হয়েছিল। একটাও উত্তর আসেনি। এত যে হামলা হয়েছে, একটাও ‘সন্ত্রাস বিরোধী দিবস’ পালন করেছেন আজ পর্যন্ত?’ দেশের সংবাদমাধ্যম নিয়েও তিনি তোপ দেগেছেন কেন্দ্রকে। তিনি বলেন, ‘দেশে কোনও নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যম নেই। মিডিয়াকে শিখিয়ে দেওয়া হয়, কী করতে হবে, আর কী করতে হবে না। বিজেপি করলে সাত খুন মাফ। অন্যেরা করলে বন্ধ করে দেওয়া হয় তাদের। কারা সংবিধানকে সম্মানের কথা বলছে? যারা সবিধানকে সম্মানই করে না।’ তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কেন্দ্রের নির্দেশে আগামী ২৫ জুন রাজ্য ওই ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ পালন করবে না।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)