ফ্লাইওভারে উঠে মরণঝাঁপ, পুলিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
বর্তমান | ১৯ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: গার্ডেনরিচ ফ্লাইওভারের উপরে হাঁটচলা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। সেই ফ্লাইওভারে বিনা বাধায় হেঁটে উঠলেন এক যুবক। তারপর প্রায় আটতলা সমান উঁচু ফ্লাইওভার থেকে তিনি মরণঝাঁপ দিলেন। পুলিস সূত্রে খবর, অত উপর থেকে পড়ার জন্য যুবকের মাথা ও মুখে গভীর ক্ষত রয়েছে। ফলে তাঁকে চেনা যাচ্ছে না। রাত পর্যন্ত তাঁর নাম, পরিচয় জানা যায়নি। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করছে দক্ষিণ বন্দর থানা।
বুধবার ভরসন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটে। গার্ডেনরিচ ফ্লাইওভারের নীচে সোনডিঙি রোডে আচমকাই বিকট শব্দ হয়। বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায় সেই শব্দ পেয়ে ছুটে আসেন পাশের এক চায়ের দোকানের কর্মী। সঞ্জীব শ্যাম নামে ওই প্রৌঢ় জানান, ‘দেখি ফুল প্যান্ট আর গেঞ্জি পরা এক যুবক পড়ে রয়েছেন। মাথা ফেটে গিয়েছে। গোটা রাস্তা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। ডাকাডাকির চেষ্টা করি। কিন্তু, যুবক কোনও উত্তর দেননি’। এরপরেই আশপাশ থেকে স্থানীয়রা ছুটে আসেন। পুলিসে খবর দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় সাউথ ওয়েস্ট ট্রাফিক গার্ড ও দক্ষিণ বন্দর থানার পুলিস। দেহটি উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই চিকিৎসকরা যুবককে মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে পুলিসকে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যুবকের বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিসের অনুমান, আত্মঘাতী হয়েছেন ওই যুবক। ফ্লাইওভারের কোন ফ্ল্যাঙ্ক দিয়ে যুবক উঠেছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফ্লাইওভারের কোন অংশ থেকেই বা তিনি ঝাঁপ দিলেন, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। লালবাজারের এক কর্তা জানান, ফ্লাইওভারের উপরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তা খতিয়ে দেখলে ঘটনাটি স্পষ্ট হবে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, মাস দেড়েক আগে গার্ডেনরিচ ফ্লাইওভারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। বিলাসবহুল গাড়িতে উদ্দাম গতি তুলে জয়রাইডে বের হয় তিন কিশোর সহ পাঁচ বন্ধু। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফ্লাইওভারের মাঝে গার্ড ওয়ালে ধাক্কা মেরে উল্টে যায় গাড়িটি। মৃত্যু হয় ১৭ বছরের এক কিশোরের। এরপরেই ফ্লাইওভারের নিরাপত্তা নিয়ে কড়া পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেয় লালবাজার। সেই সময় পুলিস জানায়, সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ফ্লাইওভারের দু’প্রান্তে গার্ডরেল ও পুলিসকর্মী মোতায়েন করা হবে। বেপরোয়া চালক ও বিপজ্জনক গাড়ি পাকড়াও করতেই এই ব্যবস্থা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এই ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে হাঁটা-চলা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। সেক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিস মোতায়েন থাকলে হেঁটে ফ্লাইওভারে ওঠা যুবককে নিশ্চিতভাবে দেখতে পেতেন। তাহলে কি পুলিসি প্রহরা ছিল না? নিষিদ্ধ ফ্লাইওভারের এই যুবকের জন্য কোনও পথ দুর্ঘটনাও ঘটতে পারত, সেক্ষেত্রে দায় কার হতো? এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে গোটা এলাকায়।