• সড়বড়ির স্কুলে ছাত্রী সংখ্যা শূন্য, শিক্ষিকা ৪
    বর্তমান | ১৯ জুন ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: এ যেন উলটপুরাণ! সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কয়েক হাজার শিক্ষক ও শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি যাওয়ায় স্কুল চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রধান শিক্ষকরা। পুরুলিয়া জেলাজুড়ে প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয় শিক্ষকের অভাবে ভুগছে। অথচ নিতুড়িয়া ব্লকের একটি বিদ্যালয়ের ছবিটা একেবারে উল্টো। ব্লকের সড়বড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের নডিহা জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয়ে ছাত্রী সংখ্যা শূন্য। অথচ বিদ্যালয়ে রয়েছেন চারজন শিক্ষিকা। আছেন একজন শিক্ষাকর্মীও (গ্রুপ-ডি)। বিদ্যালয়ের ছাত্রী না থাকলেও তাঁরা নিয়মিত আসেন। গল্পগুজব করে, বই পড়ে, মোবাইল ঘেঁটে সময় কাটান। তারপর বাড়ি ফিরে যান। শিক্ষিকারা নাকি বিদ্যালয়টি চালু রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। আবার শুধু ‘আসি যায় মাইনে পাই’ কেন হবে? তার জন্য অন্যত্র বদলির জন্য সুপারিশও করেছেন। কিন্তু আবেদন কার্যকরী হয়নি। ফলে ছাত্রীশূন্য বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী আসছেন, বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (উচ্চমাধ্যমিক) মহুয়া বসাক বলেন, বিদ্যালয়ের সমস্যার কথা জানার পরেই স্থানীয় ব্লক প্রশাসনকে বিষয়টি দেখার জন্য জানানো হয়েছে। বিদ্যালয় যাতে কিছু ছাত্রী ভর্তি করে সমস্যার সমাধান করতে বলা হয়েছে। বিদ্যালয়টি কোনও ভাবেই বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম আমলে মেয়েদের শিক্ষার প্রসারে নডিহা জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয় তৈরি হয়েছিল। এলাকার বিভিন্ন পঞ্চায়েতের ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে ভর্তি হতো। স্কুলটি সুন্দরভাবে চলত। কিন্তু অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পর অন্য স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে ছাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল। তাই কয়েক বছর আগে এলাকার বাসিন্দারা বিদ্যালয়টিকে মাধ্যমিক স্তরে উন্নিত করার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি। যার ফলে ধীরে ধীরে ছাত্রীর সংখ্যা কমতে থাকে। চলতি বছর থেকে বিদ্যালয়টি ছাত্রীশূন্য হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নবম শ্রেণিতে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয়। তারা শিক্ষাশ্রী, কন্যাশ্রী প্রভৃতি সরকারি প্রকল্পের সুবিধে পেতে গিয়ে হয়রান হয়। ওই এলাকায় রানিপুর কোলিয়ারি হাই স্কুল, পারবেলিয়া কোলিয়ারি হাই স্কুল, শালতোড় হাই স্কুল রয়েছে। তার মাঝে নডিহা জুনিয়ার বালিকা বিদ্যালয়টি অবস্থিত। ফলে ছাত্রীরা জুনিয়র বিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে সরাসরি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে চারজন শিক্ষিকার মধ্যে দুইজন আসানসোল, একজন কুলটি এবং অপরজন পূর্ব মেদিনীপুর থেকে আসেন। তাঁরা ইংরেজি, বাংলা, গণিত এবং ভূগোলের শিক্ষিকা। টিআইসি লিপিকা মণ্ডল বলেন, কয়েকজন ছাত্রী ছিল। এবছর তারা টিসি নিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তাদের অনেক বুঝিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সম্ভব হয়নি। আসানসোল থেকে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসি। অপর শিক্ষিকা মধুমিতা ভৌমিক বলেন, বর্তমানে পিএইচডি করেছি। শিক্ষাদপ্তরে আবেদন করেছি অন্য বিদ্যালয়ে বদলির জন্য। নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সুভাষ বাউরি বলেন, বিদ্যালয়টিকে কীভাবে চালু করা সম্ভব তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে এলাকার বাসিন্দাদের নিয়ে আলোচনা করা 

    হবে।  ছাত্রী শূন্য নিতুড়িয়া ব্লকের নডিহা জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয়। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)