সীমান্তে মাথা তুলেছে পাটের জঙ্গল, শুরু পাচারের মরশুম, বাড়তি নজরদারি বিএসএফ ও পুলিসের
বর্তমান | ১৯ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: ঘন সবুজ খেত মুছে দিয়েছে সীমান্তের সীমানা। ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে পাটের ঘন জঙ্গল। আর এই পাট খেতের আড়ালে প্রতিবছর দেদার চলে চোরাচালান। জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বাড়তে থাকে। কারণ, এই সময় এক একটি পাটগাছ মানুষের উচ্চতাকেও ছাড়িয়ে যায়। সেই সুযোগে বিএসএফের নজরদারি এড়িয়ে এই ঘন পাট খেতের আড়ালে সহজেই মিশে গিয়ে ওপার বাংলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় মাদক, নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ, চাষের সার ও কীটনাশক, মশলা এবং গৃহস্থালীর সামগ্রী। এই পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে বিএসএফ। অতি সক্রিয় রয়েছে বিএসএফের গোয়েন্দা বিভাগও। এক আধিকারিক বলেন, প্রতিবছর এই পাট গাছ বড় হওয়ার সময় আমাদের বাড়তি নজরদারি করতে হয়। এই সময়ে পাট গাছের আড়ালে থেকে সীমান্তের ওপারে সহজে চোরাচালান করে পাচারকারীরা। জানা গিয়েছে, ফি বছর বর্ষাকালই চোরা চালানোর মরশুম। যোগীরাজ্য থেকে লক্ষ লক্ষ নিষিদ্ধ কাশির সিরাপের বোতল বড় বড় ট্রাকে করে চলে আসে সীমান্তের গ্রামগুলিতে। সেখানে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রাখা হয় সেগুলি। অতিরিক্ত কোডাইন মিশ্রিত এই সিরাপ বাংলাদেশে মাদক হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। তাই সীমান্তের পাচারকারীদের প্রথম পছন্দ সিরাপ। গ্রামে মজুত করা সিরাপ সুযোগ বুঝে পাট খেতের আড়াল দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ওপার বাংলায়। বর্ষাকাল ও শীতকালে সবথেকে বেশি কাশির সিরাপ পাচার করে সীমান্তের পাচারকারীরা। আবার ওপার থেকেও অবৈধভাবে এপারে আসে কাঁচা সোনা ও ইলিশ মাছ। তবে, পাট গাছের আড়ালে চোরা কারবার হওয়ায় সহজে বিএসএফের নজরে আসে না। বিশেষ করে ভোরবেলা এবং সন্ধ্যা বেলায় পাচারকারীরা অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে চোরা চালানোর কাজে নামে।
বিএসএফের পাশাপাশি সীমান্তবর্তী থানাগুলির আধিকারিকরাও রাস্তায় নাকা তল্লাশি শুরু করেছে। বিশেষ করে প্রতিবছর সাগরপাড়া, রানিনগর, জলঙ্গি রানিতলা, ভগবানগোলা ও লালগোলা সীমান্ত দিয়ে সামগ্রী পাচারের চেষ্টা চলে। সীমান্তে পাচার রুখতে বছর দশেক আগে কেন্দ্র সরকারের কাছে পাটচাষ বন্ধের আর্জি জানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। তাদের দাবি ছিল, সীমান্তের দু’পাশে প্রায় মানুষ সমান লম্বা পাটগাছের আড়ালকে কাজে লাগিয়ে পাচার করছে দুষ্কৃতীরা। পাটখেতের ওপারে কী ঘটছে, তা দূর থেকে দেখে বোঝা যায় না। বিএসএফ চাইছিল, কেন্দ্র বিষয়টি রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে পাটের বিকল্প চাষের ব্যবস্থা করুক। তবে সীমান্তের চাষিদের প্রশ্ন, পাচারের জন্য শুধু পাটকেই কেন দায়ী করা হয়? পাট চাষ তো বছরে তিন থেকে চার মাসের ব্যাপার। তাহলে বাকি সময়টা কী ভাবে পাচার চলে? পাট চাষ করে চাষিদের ব্যাপক মুনাফা হয়। সেই কারণেই অধিকাংশ চাষি সহজে উচ্চফলন পাট চাষ করে সীমান্তের পতিত জমিতে। আর সেই সুযোগটাকে কাজে লাগায় দুষ্কৃতীরা।