• দুর্গাপুরের অলিতে গলিতে ডান্স বার বিনোদনের ঢালাও আয়োজনে উদ্বেগ
    বর্তমান | ১৯ জুন ২০২৫
  • সুমন তিওয়ারি, দুর্গাপুর: দুর্গাপুরের একটি শপিং মলের মাল্টিপ্লেক্সে সপরিবার ‘একেন বাবু’ দেখতে গিয়েছিলেন দুর্গাপুর পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। সেখানেই তাঁর যে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয়, তাতেই পরিষ্কার বোঝা যাবে দুর্গাপুর শহরের বর্তমান সাংস্কৃতিক অধঃপতন। ওই শপিং মলের একটি ফ্লোরে রয়েছে ড্যান্স বার। সিনেমা চলাকালীনই সেখান থেকে ক্রমাগত ভেসে আসতে থাকে উচ্চগ্রামের গানের শব্দ আর উদ্দাম নৃত্যের আওয়াজ। যা সিনেমা হলের নীরবতাকে ভেঙে চৌচির করে দিচ্ছিল। অগত্যা সিনেমা না দেখেই বেরিয়ে আসতে হয়েছিল অনিন্দিতা দেবী ও তাঁর মতো অনেককে। 

    পুরসভার সর্বময় কর্ত্রীরই যখন এই অভিজ্ঞতা, তখন সহজেই অনুমেয় শহরের আম নাগরিকদের কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় প্রতিনিয়ত। দুর্গাপুরের অলিতে গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে একের পর এক ডান্স বার। প্রতি রাতে শহরবাসী সাক্ষী থাকেন ডান্স বারগুলির লাগামছাড়া হুল্লোড়ের। দেদার ডান্স বারের অনুমতি দিয়েই দুর্গাপুরের সংস্কৃতিকে বিপন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। 

    ডান্স বারের নর্তকীদের দুর্গাপুরের বিভিন্ন সম্ভ্রান্ত এলাকায় বাড়ি ভাড়া করে রাখা হচ্ছে। সর্বক্ষণ  স্বল্প পোশাক পরে থাকা সেই মেয়েরা দিনের বেলাতেও দেদার ফুর্তি করছে বলে অভিযোগ। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দুর্গাপুর থানার সেপকোর বাসিন্দারা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। পুলিসকে এসে আশ্বাস দিয়ে বাসিন্দাদের শান্ত করতে হয়। অভিযোগ ছিল, মেয়েরা নোংরা জিনিস নানা বাড়ির দিকে ছুড়ে ফেলছে। বিভিন্ন সময়ে গাড়িতে করে লোক আসছে, তাদের নিয়ে যাচ্ছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকাগুলিতে ছোট ছোট নিষিদ্ধপল্লি তৈরি করার জোগাড় হয়েছে। প্রতিবাদ করার পরেও দুর্গাপুর শহরের পরিস্থিতির বদল হয়নি। শহরে ডান্স বারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। স্বল্প পোশাক পরিহিত মেয়েরা সেখানে নৃত্য পরিবেশন করছেন। মদের ফোয়ারা ছুটছে, তাতেই অংশ নিচ্ছে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা। এখানেই সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ বাসিন্দাদের। নয়া প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বাবা মায়েরা বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত। স্টিল সিটি দুর্গাপুর এখন এডুকেশন হাব। দূর দূরান্ত থেকে বিভিন্ন জেলার ছেলেমেয়েরা এখানে পড়তে আসেন। তাঁরা উচ্চশিক্ষিত হয়ে ভালো চাকরি পাবেনে, এই স্বপ্ন দেখেন তাঁদের বাড়ির লোকজন। অথচ অনেকেই এখানে এসে এই ফুর্তিতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, এই অপসংস্কৃতির জেরে ওইসব পড়ুয়ারা বিপথে চালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ। কিশোরী, যুবতীদের প্রলুব্ধ করে এই পেশায় নামানোর একটা চক্র সক্রিয় হগেছে বলে অভিযোগ।

    বিজেপি নেতা চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দুর্গাপুরের অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত। কীভাবে অবাধে এত ডান্স বার খুলে গেল, তা  তদন্ত করা প্রয়োজন। তাদের অনুমোদন বাতিল করা হোক। 

    দুর্গাপুর পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, এখন বাড়িতে বসে অনলাইনে আবেদন করলেই ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া যায়। তারা সেই ভাবেই অনুমোদন পেয়েছেন বলে জেনেছি। কয়েকদিন আগেই আমি পুরসভার কমিশনারকে নিয়ে জেলাশাসকের কাছে গিয়েছিলাম। তাকে অনুরোধ করেছি, দুর্গাপুরের সংস্কৃতি বাঁচাতে এই অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। 

    দুর্গাপুরের এসিপি সুবীর রায় বলেন, সরকারি অনুমতি নিয়ে ডান্স বার চালালে আমাদের কিছুই করণীয় নেই। 
  • Link to this news (বর্তমান)