নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: খুন করার পর দেহ টুকরো টুকরো করাই তার নেশা। এরমধ্যেই পৈশাচিক আনন্দ খুঁজে পায় সে। আর সেই ‘আনন্দ’ পেতে একের পর এক শিকার ধরত দীঘা থানার রতনপুরের বাসিন্দা আনসারুল শা ওরফে কালা। শিকারের তালিকায় ছিলেন এক যুবতীও। ধর্ষণ করার পর তাঁকে খুন করে সে। দেহ টুকরো টুকরো করে ফেলে দেয় জঙ্গলে। পরে প্রিয় বন্ধুকেও হত্যা করে ধড় ও মুণ্ড আলাদা করে দিয়েছিল আনসারুল।
পুলিস জানিয়েছে, ওই বন্ধুর নাম রাজীব দাস। তাঁকে নৃশংসভাবে খুন করে আনসারুল। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে গত ২ sজুন পুলিস চেন্নাই থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। জেরা শুরু করতেই একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য পান তদন্তকারীরা। হাড়হিম করা সেইসব তথ্য। ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর। রামনগর থানার বসন্তপুরে শ্মশান সংলগ্ন জঙ্গলে এক যুবতীর বস্তাবন্দি টুকরো টুকরো দেহ উদ্ধার হয়। জেরায় আনসারুল জানিয়েছে, সে ওই ঘটনায় জড়িত। পুলিস সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘রামনগরে দু’টি নৃশংস খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা আনসারুল স্বীকার করেছে। ধৃত যুবক এক ধরনের সাইকো কিলার। হেফাজতে থাকাকালীন ওর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ ধরনের দাগী অপরাধীদের সংশোধনাগার উপযুক্ত জায়গা।’
তদন্তে উঠে আসছে, ২৬ বছরের আনসারুলের পছন্দের সিনেমা ‘ক্রাইম-থ্রিলার’ দৃশ্যম। ক্রাইম পেট্রল দেখতেও পছন্দ করে। দীঘা ও রামনগরের ১৮ থেকে ২৫ বছরের যুবকদের নিয়ে একটি টিম রয়েছে তার। তোলা আদায়, মেয়েদের নিয়ে স্ফূর্তি এবং মদ ও মাদকে আসক্ত হয়ে থাকত সকলেই। গত বছর ২৭ জুন রামনগর থানার বসন্তপুরে দেউলিহাট-দীঘা রাস্তার পাশে জঙ্গলের মধ্যে একটি বস্তা পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়দের কৌতূহল তৈরি হয়। সেটি খুলতেই আঁতকে ওঠেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ২৫-২৬ বছর বয়সি এক যুবতীর দেহের খণ্ড খণ্ড অংশ। তাতে মাথা ছিল না। দেহের সঙ্গে বাঁ হাত থাকলেও ডান হাত কাটা। শরীর থেকে দুটো পা কেটে আলাদা করা হয়েছিল। শরীরে কোনও পোশাক ছিল না। ঘটনার পর প্রায় আট মাস সময় কেটে গিয়েছে। ওই নৃশংস খুনের ঘটনায় কিনারা করতে পুলিস নানাভাবে চেষ্টা করেছে। কিন্তু, কোনও ক্লু খুঁজে পাচ্ছিল না। জেলার ক্রাইম মনিটরিং সেল (সিএমজি) এনিয়ে লেগে থেকেও কিনারা করতে পারেনি। অবশেষে রাজীব খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের পাকড়াও করতেই যুবতী হত্যার রহস্য ভেদ করে পুলিস। এরপর গত ৯ মে রামনগর থানার গোবিন্দপুরে ঝোপের মধ্যে একটি মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার করে পুলিস। ২৩ মে জানা যায়, মৃত যুবকের নাম রাজীব দাস। রাজীবকে খুনের ঘটনায় পুলিস আগে সোমনাথ দাস, শেখ সামিউল ইসলাম ও রাজীব বর নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু, মূল অভিযুক্ত আনসারুল চেন্নাইয়ে গাঢাকা দিয়েছিল। ২ জুন সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। নিহত রাজীব দাসও আনসারুলের টিমের এক সদস্য। জানা গিয়েছে, বসন্তপুরে যুবতীকে গণধর্ষণ ও নৃশংস খুনের ঘটনায় আনসারুলকে পুলিসে ধরিয়ে দেওয়া নিয়ে মাঝেমধ্যে ব্ল্যাকমেল করত রাজীব। সেজন্য তাঁকে মদের ঠেকে ডেকে মাথা ও দেহ আলাদা করে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। রাজীব খুনের ঘটনায় ধৃত আনসারুল স্বীকার করেছে, আট মাস আগে সে যুবতীকে ধর্ষণ করে খুন করেছে। তারপর খণ্ড খণ্ড দেহ বস্তায় পুরে জঙ্গলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। ওই ঘটনায় আরও কয়েকজন জড়িত। তাদের নাগাল পেতে তল্লাশি শুরু করেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিস।