• এল ৯ কোটি টাকার ইনজেকশন! মেরুদণ্ডের অতি বিরল ও মারাত্মক রোগে আক্রান্ত ছোট্ট অশ্মিকার জীবনে সূর্যোদয়...
    ২৪ ঘন্টা | ১৯ জুন ২০২৫
  • অয়ন শর্মা: সম্পূর্ণ ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে পূর্ব ভারতের প্রথম শিশু হিসেবে ১৬ কোটি টাকার জিন থেরাপি পেল অশ্মিকা দাস (Aasmika Das)। চিকিৎসা হল পিয়ারলেস হাসপাতালে। একেই বোধ হয় বলে, বিজ্ঞান, আশা এবং মানুষের ঐক্যবদ্ধতার সুফল। এক বিরল দৃষ্টান্তের সাক্ষী থাকল কলকাতা। নদীয়া জেলার রানাঘাটের কয়েক মাসের কন্যা অশ্মিকা। মেরুদণ্ড সংক্রান্ত বিরল ও মারাত্মক রোগ 'স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রপি' (SMA-Spinal Muscular Atrophy) টাইপ ওয়ান (Type 1)-এর বিরুদ্ধে লড়াই করছে সে। সেই লড়াইয়ের পথেই সে হয়ে উঠল পূর্ব ভারতের প্রথম শিশু, যে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল জিন থেরাপি জোল জেন্সমা (Zolgensma) পেয়েছে। এবং সেটা সে পেয়েছে সম্পূর্ণভাবে সাধারণ মানুষের অনুদানের সংগৃহীত অর্থে, অর্থাৎ ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে!

    অভূতপূর্ব

    মাত্র ৭ মাসে দেশ-বিদেশের প্রায় ৬৫ হাজার মানুষের সহযোগিতায় সংগ্রহ করা হয়েছে ৯ কোটিরও বেশি টাকা। এই বিপুল অর্থ সংগ্রহ সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, সামাজিক প্রচার এবং অসংখ্য অজানা মানুষের উদার মনোভাবের জন্য। কী বলছে অশ্মিকার পরিবার? অশ্মিকার বাবা শুভঙ্কর দাস জানান, "যখন জানতে পারলাম, SMA হয়েছে, মনে হয়েছিল পুরো পৃথিবীটাই থেমে গেল!" তিনি যোগ করেন,  "কিন্তু দেশের নানা প্রান্ত থেকে যেভাবে মানুষ এগিয়ে এসেছেন, তাতে নতুন করে বিশ্বাস ফিরে পেয়েছি। আমাদের মেয়ের জীবন ফিরে এসেছে মানুষের ভালবাসায়। পিয়ারলেস হাসতাপাতালকে ধন্যবাদ, এই নতুন জীবন উপহার দিতে সাহায্য করার জন্য।"

    জোল জেন্সমা এবং ১৬ কোটি

    এসএমএ টাইপ ওয়ান (SMA Type 1) হল একটি বিরল জিনঘটিত রোগ, যার ফলে শিশুর পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে অক্ষম হয়। এই রোগের একমাত্র কার্যকর চিকিৎসা হল জোল জেন্সমা (Zolgensma)। এটি এককালীন জিন থেরাপি, যার মূল্য ১৬ কোটি টাকারও বেশি। বিশ্ববিখ্যাত এই ওষুধটি ২ বছর বয়সের আগেই প্রয়োগ করতে হয়, না হলে কার্যকারিতা হ্রাস পায়। এই চিকিৎসায় ত্রুটিপূর্ণ জিন এসএমএন ওয়ান (SMN1) প্রতিস্থাপন করে রোগের অগ্রগতি বন্ধ করা সম্ভব।

    পূর্ব ভারতে এই প্রথম

    পিয়ারলেস হাসপাতালে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিশু বিশেষজ্ঞ ও নার্সিং টিমের তত্ত্বাবধানে এই জিন থেরাপি সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়। চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন ডা. সংযুক্তা দে, ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর, শিশু বিভাগ, পিয়ারসেল হাসপাতাল। তিনি বলেন, 'পূর্ব ভারতে এই প্রথমবার শুধুমাত্র ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে জোলজেন্সমা (Zolgensma) প্রয়োগ করা সম্ভব হল। এই চিকিৎসা শুধু অশ্মিকার জীবনই বদলে দেবে না, এসএমএ টাইপ ওয়ানে আক্রান্ত অন্যান্য শিশুদের জন্যও একটা নতুন আশা তৈরি করবে।"

    মানবতার অসাধারণ নিদর্শন

    পিয়ারলেস হাসপাতালের এমডি শ্রী রবীন্দ্র পাই বলেন, "এটা শুধু চিকিৎসার গল্প নয়, এটা মানবতার এক অসাধারণ নিদর্শন। আশা করি, এই উদাহরণ ভবিষ্যতে নীতিগত পরিবর্তন আনবে এবং এসএমএ টাইপ ওয়ান-সহ অন্যান্য বিরল রোগের চিকিৎসায় সব স্তরে সক্রিয়তা আরও বাড়বে।"

    এসএমএ টাইপ ওয়ান সম্পর্কে কিছু কথা

    স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রপি টাইপ ওয়ান (Spinal Muscular Atrophy Type 1) হল এক বিরল জিনঘটিত স্নায়বিক রোগ, যা প্রতি ১০,০০০ শিশুর মধ্যে ১ জনকে আক্রান্ত করে। আশ্চর্যের বিষয়, ভারতে প্রায় প্রতি ৫০ জনের মধ্যে ১ জন এই রোগের বাহক। যদি দুজন বাহক বিয়ে করেন, তাহলে তাঁদের সন্তানের এসএমএ হওয়ার সম্ভাবনা ২৫%।


    ২০২১ সালে এসএমএ-কে জাতীয় বিরল রোগ নীতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু এখনও অর্থ সাহায্য এবং ওষুধপ্রাপ্তি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেই রয়ে গিয়েছে।

    সচেতনতা, সহমর্মিতা এবং

    প্রসঙ্গত, অশ্মিকার চিকিৎ সা ঘিরে যা-যা কর্মকাণ্ড হল, তা এটাই প্রমাণ করে যে, সচেতনতা, সহমর্মিতা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে বিরল রোগের চিকিৎসাও এখন সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে আনা সম্ভব। বর্তমানে অস্মিকার নিয়মিত ফলো-আপ, ফিজিওথেরাপি ও পুষ্টির যত্ন চলছে পিয়ারলেস হাসপাতালেই। তার বাবা-মা এসএমএ টাইপ ওয়ান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে ও অন্য পরিবারকে সহায়তা করতেও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)