‘হাওয়া খারাপ’, উত্তাল সমুদ্র থেকে অবিলম্বে মৎস্যজীবীদের ঘরে ফেরার নির্দেশ দিল মৎস্য দফতর
আনন্দবাজার | ১৮ জুন ২০২৫
দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার প্রবেশ। কলকাতায় দিনভর বৃষ্টি হচ্ছে। উপকূলবর্তী জেলাগুলিতেও টানা বর্ষণ চলছে। উত্তাল বঙ্গোপসাগর। তাই অবিলম্বে মৎস্যজীবীদের সমুদ্র থেকে ফিরে আসার নির্দেশ দিল রাজ্য মৎস্য দফতর। মাছের ভরা মরসুমের শুরুতে ক্ষতির মুখে মৎস্যজীবীরা।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ এবং খারাপ আবহাওয়ার দরুণ উত্তাল সমুদ্র। এই পরিস্থিতিতে যে মৎস্যজীবীদের ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে গিয়েছেন, তাঁদের অবিলম্বে উপকূলে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মৎস্য দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী ১৯ জুন (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত সমুদ্রে যাওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, নামখানা ও সংলগ্ন এলাকার হাজার হাজার মৎস্যজীবী ঘরে ফিরছেন। মরসুমের শুরুতে মনখারাপ তাঁদের।
গত ১৪ জুন গভীর রাতে কাকদ্বীপের বিভিন্ন খেয়াঘাট থেকে কয়েক হাজার ট্রলার সমুদ্রে পাড়ি দেয়। প্রথম দফাতেই প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে মৎস্যজীবীদের জালে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বার ইলিশ ধরা পড়ছে বেশি। তাই মৎস্যজীবীদের মধ্যে আশা জেগেছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, গত দুই দিনে প্রায় ২০০ টন ইলিশ উঠে এসেছে, যা গত চার বছরের মধ্যে মরসুমের শুরুতেই রেকর্ড বলে মনে করছে মৎস্যজীবী সংগঠন। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় আশায় ছিলেন মৎস্যজীবীরা।
কিন্তু হঠাৎ করে আবহাওয়ার পরিবর্তনে ঘূর্ণাবর্ত এবং জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় সব বিশ বাঁও জলে। বিপদ এড়াতে আগাম সতর্কবার্তা দিয়ে ট্রলারগুলোকে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। বুধবার সকালে প্রচুর ট্রলার ফিরে এসেছে উপকূলে। সুন্দরবন উপকূলে মাইকিং করছে পুলিশ। প্রশাসনের তরফে মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেই জানানো হয়েছে।
সুন্দরবন সামুদ্রিক মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র বলেন, “উত্তাল সমুদ্রের মধ্যে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া যায় না। কিন্তু মরসুমের শুরুতেই সমুদ্রে না যেতে পারলে প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে আমাদের।” মৎস্যজীবী নাড়ু গোপাল সাঁতরারও একই কথা। গলায় আশঙ্কার সুর তাঁর। নাড়ু বলেন, ‘‘মাছ পাওয়া যাচ্ছিল ভালই। এখন সমুদ্রে যেতে না পারলে ধারদেনা বাড়বে।”
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমি অক্ষরেখার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বাংলা ও ওড়িশা হয়ে ঝাড়খণ্ড এবং বিহারের বেশ কিছু অংশে ঢুকে পড়েছে মৌসুমি বায়ু। তা ছাড়া, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। তার জেরে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশে একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। ক্রমে সেটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে বুধ এবং বৃহস্পতিবারেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায়।