প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় আগে কলকাতার হেস্টিংস এলাকায় এক নৃশংস ঘটনায় রাজ্যজুড়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল। আড়াই বছরের এক শিশুকে ফুটপাত থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত সুরেশ পাসোয়ানকে আগেই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আদালত। সেই মৃত্যুদণ্ড রদ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তার পরিবর্তে দোষীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল হাইকোর্ট।
বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, অপরাধীর দোষ প্রমাণিত। তবে অপরাধীর আর্থ-সামাজিক পটভূমি, অপরাধমূলক ইতিহাসের অনুপস্থিতি এবং মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ডের সাজা উপযুক্ত নয়। এরপরেই ডিভিশন বেঞ্চ অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড রদ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, এই অপরাধ মানবতার বিরুদ্ধে। তবে অভিযুক্তের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, মানসিক অবস্থা ও পূর্ব অপরাধের অনুপস্থিতি মৃত্যুদণ্ডের মতো চরম শাস্তি দেওয়া ঠিক নয়।
ঘটনাটি ঘটে ২০১৩ সালের ২০-২১ জুলাই রাতে। হেস্টিংস ফ্লাইওভারের নিচে তার ঠাকুমার সঙ্গে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় শিশুটি নিখোঁজ হয়। পরদিন সকালে রয়্যাল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাবের
আদালতের প্রধান বিচারক ২০১৯ সালের ২৬ মার্চের রায় ঘোষণা করেন। তাতে পাসোয়ানকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪ ধারা এবং পকসো আইনের ৬ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে এবং মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত।মামলার শুনানির সময় ৩২ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারী অভিযুক্তকে ঘটনাস্থলের আশেপাশে দেখার কথা জানান। দু’জন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তারা পাসোয়ানকে একটি শিশুকে কোলে করে নিয়ে যেতে দেখেছিলেন।
পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন অভিযুক্তের দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে শিশুর পোশাক উদ্ধার করা হয়। জানা যায়, ঘটনার সময় পাসোয়ান রয়্যাল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাবের আস্তাবলে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু ঘটনার পর কলকাতা থেকে পালিয়ে যান। পরে বিহারের বৈশালী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে শিয়ালদা-হাজিপুর ট্রেনের টিকিটও উদ্ধার হয়। আস্তাবলের হাজিরার রেকর্ড থেকে তার ওইদিন অনুপস্থিত থাকার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়।