বিধান সরকার: গত ৫ মে হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় আড়াই বছরের শিশু ঈশা জেনাকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন তার বাবা-মা। চক বাঁশবেড়িয়া (Bansbesria) মন্দিরতলার বাসিন্দার দম্পতি অশোক ও অনুপমা জেনার ছোটো মেয়ে ঈশা। অশোক বাঁশবেড়িয়া গ্যাঞ্জেস জুট মিলের শ্রমিক। মেয়েকে ভর্তি করে মা অনুপমা উড়িষ্যা চলে যান তার মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে। এদিকে দুদিন চিকিৎসার পর সুস্থ হলে ঈশাকে ছুটি দিয়ে দেয় হাসপাতাল।
মা বাবা অনুপস্থিত থাকায় হাসপাতাল থেকে শিশুকে আনতে গিয়েছিলেন তার জ্যাঠা বটকৃষ্ণ। ভর্তির সময় অভিভাবকের এক নাম ছুটি করিয়ে নিয়ে যেতে এসেছেন অন্যজন! লিগাল গার্জেন কে? তা নিয়ে বিভ্রান্তি হওয়ায় হাসপাতাল চাইল্ড লাইনকে জানায় বিষয়টি। চাইল্ড লাইন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। শিশুটিকে নিয়ে গিয়ে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিকে দেয়। কমিটি তাকে নবগ্রাম হোমে রাখে।
এরপর কেটে গেছে ৪২ দিন। শিশুটির অভিভাবক উড়িষ্যা থেকে ফিরে এসে মেয়েকে ফিরে পাবার জন্য আবেদন নিবেদন করতে থাকেন। কোনও ভাবেই কিছু হয় না। পরে জুটমিলের এক শ্রমিক নেতার মাধ্যমে যোগাযোগ হয় বাঁশবেড়িয়া পুরসভার দশ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দুর্গা রাওয়ের সঙ্গে। কাউন্সিলর বাঁশবেড়িয়ার ভাইস চেয়ারম্যান শিল্পী চট্টোপাধ্যায়কে বিষয়টি জানান। শিল্পী হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ আইনজীবী নির্মাল্য চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা বলেন। কিভাবে শিশুটিকে তার পরিবার ফিরে পাবে সেটা দেখতে বলেন।
আইনজীবী নির্মাল্য CWC র চেয়ারপার্সন মনিদীপা ঘোষের সঙ্গে কথা বলেন। শিশুটিকে তার অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু জটিলতা তৈরী হয়। শিশু নাকি তার মা বাবাকে চিনতে পারছে না বলা হয়। CWC জানিয়ে দেয় শিশুটিকে অভিভাবকহীন ঘোষণা করা হবে। নির্মাল্য চক্রবর্তী, হুগলি জেলা শাসক মুক্তা আর্যর সঙ্গে কথা বলেন। এরপর অতিরিক্ত জেলা শাসক(উন্নয়ন) অমিতেন্দু পাল,ডিএসডব্লিউ র সঙ্গে আলোচনা করেন।
অবশেষে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে শিশুটিকে ফিরে পান তার মা বাবা। স্বভাবতই খুশি শিশুর পরিবার। সামান্য ভুল বোঝাবুঝির জন্য একরক্তি শিশুকে তার পিতামাতা পরিবার ছেড়ে হোমে থাকতে হল এতগুলোদিন। নির্মাল্য চক্রবর্তী বলেন, শিশুটি তার জেঠু জেঠিমার ঘরেই বেশিরভাগ সময় থাকে। তাদের মা বাবা বলেও ডাকে। হাসপাতালে ভর্তির পর তাকে যখন ছুটি দেওয়া হয় সেই জেঠুই তাকে আনতে গিয়েছিল আর তা থেকে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।
শিশুটি প্রকৃত মা-বাবা যে রয়েছে সেটা বোঝাতে অনেকটা সময় চলে যায়। তবে সবার চেষ্টায় শিশুটি তার মা বাবার কাছে ফিরে এসেছে এটাই ভালো কথা। কাউন্সিলর দুর্গা রাও বলেন, আমরা বিষয়টা জানার পরেই শিশুকে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা গরিব সাধারণ মানুষের পাশে সব সময় থাকি। বাচ্চাটাকে আমরা ফিরে পেয়েছি।