• ট্রেনেই অসুস্থ ছাত্রী, লাইন ধরে কাঁধে নিয়ে ছুটেও বাঁচল না প্রাণ
    এই সময় | ১৮ জুন ২০২৫
  • এই সময়, কালনা: হার্টের চিকিৎসা করিয়ে মা–বাবা ও জামাইবাবুর সঙ্গে ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলেন এক তরুণী। ট্রেনের মধ্যেই আচমকা অসুস্থ হয়ে পরেন তিনি। সোমবার গভীর রাতে চন্দনা মণ্ডল (১৮) নামে ওই তরুণীকে অম্বিকা কালনা স্টেশনে নামানোর পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য রেললাইন ধরে কাঁধে করেই কিছুটা ছুটে যেতে হয় বলে পরিবারের দাবি।

    কিছুটা যাওয়ার পরে কালনা থানার টহলরত ভ্যানের পুলিশের নজরে এলে তাঁকে গাড়িতে চাপিয়ে কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে কার্যত বিনা চিকিৎসাতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী। পরিবারের অভিযোগ, রেলের হেল্পলাইন নম্বর ১৩৯–এ ফোন করেও কোনও সহায়তা মেলেনি।

    আদতে মালদার রতুয়া থানার সামসি–ভালুকা রোড এলাকার বাসিন্দা চন্দনার বাবা গুরুগ্রামে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। সেই সূত্রেই গুরুগ্রামের একটি স্কুলে পড়াশোনা করতেন ওই তরুণী। বাবা ফুলচাঁদ মণ্ডল বলেন, ‘মেয়ের হার্টের সমস্যা ছিল। বছর সাতেক আগে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ওর চিকিৎসা হয়। তার পর থেকে ঠিকঠাকই ছিল। সম্প্রতি ফের সমস্যা হচ্ছিল। তাই সোমবার দুর্গাপুরের ওই হাসপাতালে মেয়ের চেকআপ করানো হয়। তার পরে হাওড়া স্টেশনে এসে মালদায় ফেরার জন্য রাত ১১টা ৩৫–এর কাটিহার এক্সপ্রেসে চাপি।’

    ট্রেনে ওই তরুণীর সঙ্গে তাঁর বাবা ছাড়াও ছিলেন মা ও জামাইবাবু। ট্রেনে তাঁদের সঙ্গে মালদার কালিয়াচকের বাসিন্দা নুর আলম শেখ নামে পরিচিত এক যুবকের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি কলকাতায় এক আত্মীয়কে ডাক্তার দেখিয়ে মালদায় ফিরছিলেন। তাঁরা সকলে ট্রেনের জেনারেল কামরায় একসঙ্গেই ছিলেন।

    তরুণীর জামাইবাবু মিঠুন মণ্ডল বলেন, ‘ট্রেনে চড়ার পর থেকেই শ্যালিকা অসুস্থ বোধ করছিল। ত্রিবেণী স্টেশন ছাড়ার পরে সমস্যা বাড়লে রেলের ১৩৯ নম্বরে ফোন করি। হেল্পলাইনের এগজ়িকিউটিভ কাটোয়া স্টেশনে নেমে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আমরা তাঁদের বলি, কাটোয়ার আগে কালনাতেও তো হাসপাতাল রয়েছে। হেল্পলাইন থেকে তখন অম্বিকা কালনা স্টেশনে নামার কথা বলা হয়। এরমধ্যে শ্যালিকা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন ১৩৯ নম্বরে ফোন করলেও ওঁদের কাছ থেকে কোনও সহায়তা মেলেনি।’

    সোমবার রাত ২টো নাগাদ অম্বিকা কালনা স্টেশনে চন্দনাকে নিয়ে ট্রেন থেকে নামেন মিঠুনরা। তিনি বলেন, ‘কালনায় যখন আমরা নামি তখন শ্যালিকা নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। কালনা হাসপাতাল কোথায় সেটা বন্ধু নুর আলম জানত। সুনসান স্টেশনে তাই রেললাইন ধরেই কিছুটা হেঁটে যাই। নুর আলম শ্যালিকাকে কাঁধে নিয়ে হাঁটতে থাকে। কিছুটা যেতে কালনা থানার টহলরত ভ্যানের পুলিশ আমাদের আটকায়। সবকিছু শোনার পরে তারাই গাড়িতে করে শ্যালিকাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’ মঙ্গলবার কালনা মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরে ওই তরুণীর দেহ পান পরিবারের লোকেরা।

    নুর আলমের কথায়, ‘অত রাতে কোনও উপায় ছিল না। তাই মেয়েটাকে কাঁধে নিয়েই হাঁটতে থাকি। তবে আক্ষেপ রয়ে গেল, এত কিছু করেও ওকে বাঁচাতে পারলাম না। ট্রেনে অসুস্থ হয়ে পড়লে যে মানুষকে কতটা অসহায় অবস্থায় পড়তে হয় সেটাও নিজের চোখে দেখলাম। রেলের এ নিয়ে ভাবা উচিত। তা হলে কোনও যাত্রীকে এ ভাবে অসহায় অবস্থায় মরতে হবে না।’

    অভিযোগ প্রসঙ্গে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্ত বলেন, ‘সব স্টেশনে মেডিক্যাল ফেসিলিটি নেই। ১৩৯ নম্বরে ফোন করলে কাছাকাছি যে স্টেশনে রেল মেডিক্যাল ফেসিলিটি দিতে পারবে সেই স্টেশনের কথা বলা হয়। তবে ওই ট্রেনটি ব্যান্ডেলের পরে পরপর বেশ কয়েকটি স্টেশনে দাঁড়ায়। তাই কোনও একটি স্টেশনে নেমে অসুস্থ ওই তরুণীকে রাজ্য সরকারের কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারতেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।’

  • Link to this news (এই সময়)