দিগন্ত মান্না
প্রথম শ্রেণির ক্লাসের শিক্ষকের টেবিল, চেয়ারে ভর্তি কাদা–মাটি। মাটির ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ছে স্কুলের তিনটি ক্লাসরুমে। ভেঙে পড়েছে চাঙরও। মঙ্গলবার সকালে স্কুলে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। তড়িঘড়ি কাদা, মাটি সরিয়ে ক্লাসরুম সাফাই করার কাজে লেগে পড়লেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কিন্তু তারপরেও বৃষ্টি তো চলছেই।
অগত্যা ক্লাসের ভিতর ছাতা খুলে পড়াশোনা করছে খুদে পড়ুয়ারা। অফিস ঘরে ছাতা মাথায় কাজকর্ম সারলেন শিক্ষকরাও। বর্ষায় যে কোনও সময় মাথার উপর ভেঙে পড়তে পারে মাটির ছাদ। বিপদকে সঙ্গী করে পঠনপাঠন চলছে পাঁশকুড়ার রঘুনাথবাড়ি আংশিক বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে। অভিযোগ, স্কুল ভবন মেরামত করার ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করেননি প্রধান শিক্ষক অশোক কুমার ঘড়া। প্রধান শিক্ষকের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ শিক্ষা দপ্তরও।
একজন দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রধান শিক্ষকের জন্য কেন ভুগবে পড়ুয়ারা, প্রশ্ন অভিভাবকদের। চলতি বছরে শতবর্ষে পা দিয়েছে পাঁশকুড়া দক্ষিণ চক্রের রঘুনাথবাড়ি আংশিক বুনিয়াদি বিদ্যালয়। প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এখানে পঠন-পাঠন হয়। বিদ্যালয়ের পড়ুয়া সংখ্যা ২০৮। শিক্ষক–শিক্ষিকা রয়েছেন ৭ জন। স্কুলের একটি নতুন ভবন এবং একটি পুরোনো ভবন রয়েছে।
দোতলা নতুন স্কুল ভবনের চারটি ঘরের মধ্যে তিনটিতে শিশুরা বসে। অভিযোগ, স্থানীয় একটি সাংস্কৃতিক সংস্থাকে একটি ঘর ব্যবহারের জন্য দিয়ে রেখেছেন প্রধান শিক্ষক। পুরোনো স্কুল ভবনটি টালির ছাউনি দেওয়া। সেটিতে পাঁচটি ঘর রয়েছে। সেগুলির মধ্যে একটির মধ্যে রয়েছে অফিস। একটি ঘর নথিপত্র রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়। বাকি তিনটিতে ক্লাস হয়।
পুরোনো স্কুল ভবনটির একাধিক জায়গা টালির ছাউনি ভেঙে গিয়েছে। ভেঙে পড়ছে মাটির ছাদের একাংশ। বর্ষায় ভাঙা ছাউনি দিয়ে বৃষ্টির জল মাটির ছাদ চুইয়ে ক্লাসরুমে ঢুকে যায়। শুধুমাত্র ক্লাসরুমে নয়। বর্ষায় বৃষ্টির জল পড়ে স্কুলের অফিস ঘরেও। এ দিন শিক্ষক শিক্ষিকারা স্কুলে গিয়ে দেখেন ভেঙে পড়েছে মাটির ছাদের চাঙড়। প্রাক প্রাথমিকের শিশুদের ভেজা মেঝের উপর বিছানো ত্রিপলে বসে ক্লাস করে। তা ছাড়া কিছু ক্লাসে তো ছাতা খুলেই পড়াশোনা চালাতে হয়েছে। অফিসরুমের মধ্যেও বৃষ্টির জল পড়তে থাকায় ছাতা মাথায় দিয়ে শিক্ষকরা কাজকর্ম করেন।
সহকারী শিক্ষিকা মীনাক্ষী ভট্টাচার্য বলেন, ‘আজ স্কুলে এসে সহকর্মীদের সঙ্গে ভেঙে পড়া চাঙড় পরিষ্কার করলাম। ঝাঁটা দিয়ে রুমের জল বের করতে হয়। প্রতি বছর বর্ষায় আমাদের এ ভাবে ক্লাস করাতে হয়। যে কোনও সময়ে ছাদ ভেঙে বড়সড় বিপদ ঘটতে পারে। জানি না, কেন আমরা নতুন স্কুলভবনের জন্য বরাদ্দ পাচ্ছি না।’ স্থানীয়দের অভিযোগ, স্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোককুমার ঘড়া স্কুলের উন্নতির ব্যাপারে কোনও চেষ্টাই করেননি। প্রতি বছর শিশুরা ছাতা মাথায় দিয়ে ক্লাস করলেও প্রধান শিক্ষক উদাসীন বলে অভিযোগ।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক–শিক্ষিকাদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের সম্পর্কও ভালো নয় বলে একাকায় গুঞ্জন। এক অভিভাবক বলেন, ‘বর্ষায় স্কুলের ছাদ ভেঙে যে কোনও সময়ে বিপদ হতে পারে। বছরের পর বছর এ ভাবে স্কুল চলছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।’ তবে এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে জিকজ্ঞাসা করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
পাঁশকুড়া দক্ষিণ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক রাজীব বিশ্বাস বলেন, ‘ওই প্রধান শিক্ষককে একাধিকবার বলেছি স্কুল ভবন মেরামতের জন্য পরিকল্পনা জমা দিতে। উনি কোনও কথাই শোনেননি। আমাদের সঙ্গে তিনি সহযোগিতা করছেন না। বর্ষায় এ ভাবে ক্লাস করানো উচিত নয়। নতুন স্কুল ভবনে ক্লাসগুলো সরানো যেতে পারে। কিন্তু তিনি নতুন স্কুল ভবনের একাংশ একটি সাংস্কৃতিক সংস্থাকে দিয়ে রেখেছেন। কেন দিয়েছেন, সে বিষয়েও উনি কিছু বলছেন না। পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে ওই নতুন স্কুল ভবন তৈরির ব্যাপারে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি।’
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষার বিষয়টি সবার আগে দেখতে হবে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’