এই সময়: কোনও রোগী দু’লিটার জল খেয়েছেন কিন্তু বিলে দেখানো হয়েছে ২০ লিটার। কোনও রোগীকে ৫টি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে কিন্তু বিলে দেখানো হয়েছে ২০টি। রাজ্যের কোনও কোনও বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা নার্সিংহোমে এমনই কারবার চলছে বলে মঙ্গলবার বিধানসভায় ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যামেন্ডেমেন্ট বিল ২০২৫’–এর জবাবি ভাষণে দাবি করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
কোন বেসরকারি হাসপাতালে এমন অনিয়ম হয়েছে তা অবশ্য নির্দিষ্ট ভাবে তিনি উল্লেখ করেননি। তবে ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশনে এমন অনেক অভিযোগ এসেছে বলে অধিবেশনের পরে জানিয়েছেন চন্দ্রিমা। এই পরিস্থিতিতে নতুন সংশোধনীতে প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালে নির্দিষ্ট অপারেশনের ‘প্যাকেজ’ এবং বিভিন্ন পরীক্ষার ‘রেট চার্ট’ প্রকাশ্যে টাঙিয়ে রাখার কথা বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে কোনও রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত সব তথ্য ডিজিটাইজও করতে হবে। চন্দ্রিমার কথায়, ‘আমরা বলছি না প্যাকেজ কত টাকার হবে কিংবা পরীক্ষানিরীক্ষার রেট কত হবে। ই–প্রেসক্রিপশন থেকে শুরু করে চিকিৎসার যাবতীয় তথ্য ডিজিটাইজ করতে বলা হচ্ছে এই কারণে যাতে রাজ্য সরকার চাইলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল অথবা নার্সিংহোম তা সরবরাহ করতে পারে।’
রাজ্যের কোনও কোনও নার্সিংহোম কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে মারা যাওয়া রোগীকে ভেন্টিলেশনে রেখে দেওয়া হয় বলে বিলের উপরে আলোচনায় মন্তব্য করেন তৃণমূলের চিকিৎসক বিধায়ক নির্মল মাজি।
উলুবেড়িয়া–উত্তরের বিধায়কের দাবি, ‘যেখানে এক বার সিটি স্ক্যান প্রয়োজন সেখানে তিন বার করা হয়। ভেন্টিলেশনে ডেড বডি রেখে দেওয়া হয়। যেখানে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির দরকার নেই সেখানেও অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করা হয়। অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করা হয়, তা ব্যবহার করা হয় না, ফের পিছনের দরজা দিয়ে নার্সিংহোমের ফার্মেসিতে ওষুধ ফিরে যায়। এই ভাবে বিল বাড়ানো হয়।’
বেসরকারি হাসপাতাল অথবা নার্সিংহোমের প্যাকেজ বহির্ভূত বিল নিয়ন্ত্রণেই ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। তবে এ নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রশ্ন, ‘যদি নির্দিষ্ট বাজেটের মধ্যে চিকিৎসা না হয় তখন দায় কে নেবে? জীবনহানি যাতে না হয় তা দেখতে হবে। বহু ছোট নার্সিংহোমের ই–সিস্টেম নেই। রাজ্য সরকারই একটি অ্যাপ অথবা সফটওয়্যার তৈরি করুক। পরীক্ষানিরীক্ষার রেট কত হবে তা রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে দেওয়া হোক।’
রাজ্য সরকার সব স্টেক–হোল্ডারের সঙ্গে বিশদ আলোচনা না–করে তড়িঘড়ি বিল পাস করিয়েছে বলেও অভিযোগ শুভেন্দুর।