এই সময়: রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ–র ২৫ শতাংশ মেটানো সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশের মডিফিকেশন চেয়ে ইতিমধ্যেই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য। সেই আবেদন কবে শুনানির জন্য উঠবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তার আগে আদালত অবমাননার মতো পরিস্থিতি এড়াতে এই ২৫ শতাংশ বকেয়া মেটানোর পরিকল্পনাই করছে রাজ্য সরকার।
সুপ্রিম কোর্টে সরকারি কর্মচারীদের মোট বকেয়া ডিএ বাবদ যে টাকা দিতে হবে বলে রাজ্য জানিয়েছে, সেই হিসেবে ২৫ শতাংশের জন্য লাগবে প্রায় ১০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। ৩০ জুনের মধ্যে এই টাকা দিতেই হবে রাজ্যকে। সূত্রের দাবি, এই টাকার একাংশ জোগাড়ের জন্য রাজ্য সরকার খোলা বাজার থেকে ঋণ সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু করেছে। অর্থ দপ্তর সূত্রের খবর, রাজ্যে আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে এ ছাড়া রাজ্য সরকারের কাছে বিকল্প পথ নেই।
সূত্রের দাবি, আপাতত ঋণপত্র ছেড়ে খোলা বাজার থেকে ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা তোলার প্রস্তাব বিবেচনা করছে রাজ্য। এই ঋণের টাকা খরচ কী ভাবে করা যাবে, আইনে তার নির্দিষ্ট কোনও বিধি নেই। প্রয়োজন মতো সরকার এই টাকা মূলধনী বিনিয়োগে বা কর্মচারীদের বেতন মেটাতে খরচ করতে পারে। চলতি আর্থিক বছরে রাজ্য বাজেটে খোলা বাজার থেকে ৮১ হাজার ৯৭২ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা ঋণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।
তাই চলতি আর্থিক বছরের প্রথম কোয়ার্টার, অর্থাৎ এপ্রিল–জুনের মধ্যে ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বাজার থেকে ঋণ তুলতে কোনও সমস্যা হবে না। গত আর্থিক বছরে রাজ্য সরকার বাজার থেকে মোট ৮০ হাজার কোটি টাকা ঋণ সংগ্রহ করেছিল। ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে ৬৯ হাজার ৯০৮ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা খোলা বাজার থেকে ঋণ সংগ্রহ করেছিল রাজ্য।
ডিএ মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকার শীর্ষ আদালতে জানিয়েছিল, সরকারি কর্মচারীদের মোট বকেয়া ডিএ–র পরিমাণ ১১ হাজার ৮৯০ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া পেনশন প্রাপকদের জন্য মোট বকেয়া ১১ হাজার ৬১১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও শিক্ষক, পুরসভা, পঞ্চায়েত–সহ স্বশাসিত সংস্থা ও রাজ্য সরকার পরিচালিত সংস্থার কর্মীদের পাওনা ১৮ হাজার ৩৬৯ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা।
সব মিলিয়ে অঙ্কটা ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ মেনে এর ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা ৩০ জুনের মধ্যে মেটাতেই হবে। সূত্রের দাবি, সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যাঁরা এখনও কর্মরত, বকেয়া ডিএ–র ২৫ শতাংশ অর্থ তাঁদের জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ডে (জিপিএফ) জমা দেওয়া প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ, ওই বাড়তি টাকা সে ক্ষেত্রে কর্মচারীদের হাতে দিতে হবে না, সরকারের ঘরেই গচ্ছিত থাকবে। আর যাঁরা অবসর নিয়েছেন, সেই সরকারি কর্মচারীদের নির্দিষ্ট পেনশন অ্যাকাউন্টে বকেয়া টাকা দিতে হবে। এই নীতি কার্যকর হলে এই মুহূর্তে সরকারের আর্থিক বোঝা কিছুটা কমবে বলে মনে করছেন অর্থ দপ্তরের কর্তারা।
বকেয়া ডিএ–র ২৫ শতাংশ দেওয়া নিয়ে নবান্ন এখনও কোনও সরকারি নির্দেশিকা প্রকাশ করেনি। তবে সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী রায় মেনে চার সপ্তাহ অর্থাৎ ১৫ জুনের মধ্যে রাজ্য সরকার তাদের বক্তব্য শীর্ষ আদালতে জানিয়ে দিয়েছে বলে সূত্রের দাবি। তবে শীর্ষ আদালতে এখন গরমের ছুটি চলছে। তাই রাজ্য কী জানিয়েছে, তা তাঁদের জানা নেই বলে জানিয়েছেন মামলাকারী সরকারি কর্মচারীদের তরফে শ্যামল মিত্র ও মলয় মুখোপাধ্যায়।