রবিবার গভীর রাতে খিদিরপুরের অরফ্যানগঞ্জ বাজারে ভয়াবহ আগুন লেগেছিল। মঙ্গলবার বিকেলেও যা পুরোপুরি নেভেনি। এ দিনও সেখানে দমকলের ১০টি ইঞ্জিন কাজ করেছে। এ দিন দুপুরে ওই বাজারে গিয়ে দেখা গেল, পোড়া দোকানগুলি থেকে তখনও ধোঁয়া বেরোচ্ছে। এ দিন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা এসে ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান পরীক্ষার জন্য।
পোড়া দোকান থেকে যদি কিছু উদ্ধার করা যায়— এ দিন সকাল থেকে সেই চেষ্টাতেই ব্যস্ত ছিলেন ব্যবসায়ীরা। পুড়ে যাওয়া প্রায় ১৩০০ দোকানের মধ্যে বেশির ভাগই মুদির দোকান। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরেই চাল-ডাল বা মশলার প্যাকেট উদ্ধার করে, সেগুলি জলে ডুবিয়ে ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজ করছিলেন তাঁরা। ব্যবসায়ীরা জানান, প্রচুর টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাঁদের। এ দিকে, দোকান আবার কবে চালু করা যাবে, তা-ও তাঁদের অজানা। ফলে, ক্ষয়ক্ষতির অঙ্কটা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিটি পোড়া দোকানের সংস্কার এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, তিনি জানিয়েছিলেন, ব্যবসায়ীদের অন্যত্র সরিয়ে বাজারের সংস্কারের কাজ করা হবে। যদিও এ দিন ‘অরফ্যানগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতি’র সভাপতি সজ্জন আগরওয়াল সাফ বলেন, ‘‘আমরা কোনও মতেই অন্যত্র যাব না। ধ্বংসস্তূপ সাফকরে প্রশাসন দোকান আমাদের হাতে ছেড়ে দিক। আমরা নিজেদের দোকান সাময়িক ভাবে সারিয়ে নেব। পরে সরকার যখন স্থায়ী ভাবে মেরামত করবে, তখন আমরা বিভিন্ন অংশ ফাঁকা করে কাজের সুবিধাকরে দেব। কিন্তু এলাকা ছেড়ে কোথাও যাব না।’’
এ দিন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা পুড়ে যাওয়া বাজারের সামনে জড়ো হন। সেখানে রাস্তার পাশে একটি মঞ্চ গড়ে তোলা হয়। ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘‘আমরা, ব্যবসায়ীরা এক জোট হয়ে মঞ্চের উপরে ধর্নায় বসব। আমাদের একটাই দাবি, আমরা কোনও মতেই এই এলাকা থেকে সরব না। জায়গা পরিষ্কার করে প্রশাসন আমাদের হাতে দোকান ফিরিয়ে দিক।’’
ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, তাঁরা সরে গেলে আগামী দিনে ওই বিশাল এলাকায় শপিং মল গড়ে উঠতে পারে। যদিও কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন, সমস্ত দোকানের সংস্কার করে ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তা হলে শপিং মলের প্রশ্ন উঠছে কী ভাবে?’’
অরফ্যানগঞ্জ বাজারে প্রায় এক হাজার মোটবাহক কাজ করেন। সকলেই কার্যত দিনমজুর। বাজার পুড়ে যাওয়ায় তাঁদের অনেকেই বিভিন্ন জেলায় বা বিহারে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। এমনই এক জন বিহারের বাসিন্দা নরেন্দ্র সাউ। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা গাড়ি বা ভ্যান থেকে সামগ্রী বিভিন্ন দোকানে পৌঁছে দিতাম। ওই কাজ করেই কোনও মতে সংসার চলত। কিন্তু সেই পথটুকুও বন্ধ এখন। তাই অনেকেই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। আমিও দু’-এক দিনের মধ্যেই বাড়ি চলে যাব।’’
মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, পুড়ে যাওয়া প্রতিটি দোকানের সংস্কার করবে পুরসভা। এ নিয়ে এ দিন ৯ নম্বর বরো অফিসে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে ছিলেন বরোর চেয়ারপার্সন দেবলীনা বিশ্বাস-সহ পুরসভার বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা। ছিলেন ‘অরফ্যানগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতি’র প্রতিনিধিরাও। বৈঠকে ব্যবসায়ীদের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবের বিরোধিতা করা হয়। যদিও বরো চেয়ারপার্সন তাঁদের কাছে পুরসভার পাশে থাকতে আবেদন করেন।
ঠিক হয়েছে, আগুন পুরোপুরি নেভার পরে ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করে পুরসভা ওই বাজার নিয়ে সমীক্ষা করবে। তা শুরু করার আগে এ দিন পুরসভার তরফে ব্যবসায়ীদের একটি ফর্ম দেওয়া হয়। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, ব্যবসায়ীরা ওই ফর্ম পূরণ করে জমা দিলে তাঁদের দোকানের নথির সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা হবে।