• শুভেন্দু মুখ ভোটে, ইঙ্গিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের
    আনন্দবাজার | ১৮ জুন ২০২৫
  • কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে দলের অন্যতম জননেতা তিনিই। উপরন্তু, গত বিধানসভায় তিনি হারিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতে, সব ঠিক থাকলে তাই শুভেন্দু অধিকারীকেই মুখ্যমন্ত্রী মুখ করে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে নামতে চলেছে বিজেপি।

    খাতায়-কলমে বিধানসভা নির্বাচন আগামী বছর। কিন্তু হাতে দশ মাসের বেশি সময় নেই। পশ্চিমবঙ্গের আগে বিহারের নির্বাচন হলেও, বিজেপি নেতৃত্ব এ যাত্রায় যেন তেন প্রকারে বঙ্গভূমির দখল নিতে মরিয়া। তলে তলে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি। বেড়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের যাতায়াত। বাদল অধিবেশন শেষ হলেই বঙ্গ দখলে ঝাঁপিয়ে পড়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাই প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী মুখ নিয়ে কৌশল পরিবর্তনেও পিছপা নয় দল। সম্প্রতি যে রাজ্য নির্বাচনগুলি হয়েছে, যেমন মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, সব ক্ষেত্রেই মুখ্যমন্ত্রী মুখ ঘোষণা না করে ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। কিন্তু কিছু রাজ্যে, যেমন উত্তরপ্রদেশে শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের আপত্তি সত্ত্বেও তিন বছর আগে যোগী আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রী মুখ করে ভোটে যেতে হয় দলকে। রাজনীতিকদের ব্যাখ্যা, এর পিছনে প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, আরএসএসের পছন্দ-অপছন্দ, সেই ব্যক্তির নিজের রাজ্যে দলের উপরে প্রভাব কতটা— সে সব বিচার করেই সিদ্ধান্ত নেয় দল। কিন্তু যোগী উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে এতটাই শক্তি অর্জন করেছিলেন যে, দল ২০২২ সালেই বুঝেছিল, তাঁকে উপেক্ষা করলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা। হেরে পর্যন্ত যেতে পারে বিজেপি। তাই তাঁকে সরানোর ঝুঁকি নেয়নি দল।ভোটে টানা দ্বিতীয় বার জিতে মুখ্যমন্ত্রী হন যোগী।

    তেমনই পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে শুভেন্দুকেই অন্যতম (কার্যত একমাত্র) জননেতা বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘বিশ্বাসযোগ্যতা ও ভিড় টানার প্রশ্নে বর্তমানে শুভেন্দুর বিকল্প নেই। আর এক জন ছিলেন। তিনি দিলীপ ঘোষ। কিন্তু বিতর্ক এড়াতে আপাতত তাঁকে বাইরে মুখ না খুলে দলের কাজ

    মনোনিবেশ করতে বলা হয়েছে। তিনি রাজি থাকলে তাঁর পছন্দমতো আসন থেকে বিধানসভা ভোটে লড়তেও পারেন। তবে পশ্চিমবঙ্গে আমাদের সেরা বাজি শুভেন্দু। তাই আগামী দশ মাসের মধ্যে পরিস্থিতির বিশেষ পরিবর্তন না হলে, শুভেন্দুকে সামনে রেখেই ভোটে যাওয়ার কথা প্রাথমিক ভাবে ভেবে রেখেছে দল। যা পার্শ্ববর্তী রাজ্য ওড়িশাতেও হয়নি।’’

    রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ অবশ্য মনে করছে, তৃণমূলের মতো দলের বিরুদ্ধে লড়াইতে জিততে গেলে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে মাঠে নামা প্রয়োজন। কিন্তু শুভেন্দুকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হলে, দলে শুভেন্দু-বিরোধী যে অংশ রয়েছে, তাঁদের বসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া শুভেন্দু বিরোধী দলনেতা হলেও, তাঁর প্রভাব মূলত নিজের জেলাতেই সীমাবদ্ধ বলেই মনে করেন রাজনীতিকদের একাংশ। সামগ্রিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে এখনও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়নি। বিশেষ করে শহুরে শিক্ষিত সমাজের কাছে।

    কেন্দ্রীয় ওই নেতার কথায়, ‘‘সেই ঝুঁকি তো রয়েছে। কিন্তু ধারাবাহিক ভাবে সরকার বিরোধিতায় পথে নামায় জনমানসে শুভেন্দুর গ্রহণযোগ্যতা আগের চেয়ে অনেকটাই বেড়েছে। ক্ষুব্ধ মানুষ দিনের শেষে দেখেন, কারা সরকার-বিরোধিতায় পথে রয়েছেন। সেই প্রশ্নে শুভেন্দুর বিকল্প নেই।’’ শুভেন্দু ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী মুখের দৌড়ে ছিলেন রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব স্থির করেছেন, জেতা সাংসদকে বিধানসভায় দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। তাই আপাতত দৌড়ে নেই সুকান্ত।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)