পাকিস্তানি আজাদ বাংলাদেশ হয়ে ভারতে এসেছিল ১২ বছর আগে
আনন্দবাজার | ১৮ জুন ২০২৫
পাকিস্তানের হায়দরাবাদের বাসিন্দা আজাদ মল্লিক ওরফে আজাদ হোসেন বছর বারো আগে ভারতে প্রবেশ করেছিল বলে আদালতে দাবি করল ইডি। যার প্রমাণস্বরূপ কিছু নথিও জমা দিয়েছে তারা। বর্তমানে পাসপোর্ট জালিয়াতি সংক্রান্ত ইডি-র মামলায় জেল হেফাজতে রয়েছে আজাদ। এর পাশাপাশি, প্রতারণার মামলাতেও জেল হেফাজতে রয়েছে সে। সম্প্রতি বিচার ভবনের সিবিআই বিশেষ আদালতে পাসপোর্ট জালিয়াতির মামলায় আজাদের বিরুদ্ধে ৮০ পাতার চার্জশিট এবং চার হাজার পাতার নথি জমা দিয়েছে ইডি। তদন্তকারীদের দাবি, আজাদের কাছ থেকে পাকিস্তানের হায়দরাবাদের একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স উদ্ধার হয়েছে। সেই লাইসেন্সে আজাদের ছবিও রয়েছে। বিভিন্ন নথি খতিয়ে দেখার পরে তদন্তকারীদের দাবি, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানে জন্ম আজাদের। তার বাবার নাম মমতাজ-উল-হক।
ইডি সূত্রের দাবি, ১৯৯৪ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে চলে এসেছিল আজাদ। তার পরে বেআইনি ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বেশ কয়েক বার ভারতে যাতায়াত করেছে। তার পরে ২০১৩ সালে পাকাপাকি ভাবে ভারতে চলে আসে সে। তৈরি করিয়ে ফেলে জাল আধার, ভোটার ও প্যান কার্ড। এর পরে সেই সব নথির সাহায্যে ভারতীয় পাসপোর্টও পেয়ে যায় আজাদ। ইডি-র আরও দাবি, এ দেশে থিতু হওয়ার পরে রাজ্য প্রশাসনের নিচুতলার কয়েক জন কর্মী এবং কিছু দালালের সাহায্যে জাল নথি তৈরির একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে আজাদ। সেই সব জাল নথির মাধ্যমে পাঁচশোরও বেশি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর ভারতীয় পাসপোর্ট ও বিভিন্ন দেশের ভিসা তৈরি করিয়ে দিয়েছিল সে। তদন্তকারীদের দাবি, জাল নথি তৈরির পাশাপাশি মধ্য কলকাতায় বিদেশি মুদ্রা বিনিময়ের একটি সংস্থা খুলে বিদেশে টাকা পাচারের কারবারও করত আজাদ। অনুপ্রবেশকারীদের জাল নথির মাধ্যমে ভারতীয় পাসপোর্ট এবং বিভিন্ন দেশের ভিসা তৈরি করে দিয়ে পারিশ্রমিক বাবদ বাংলাদেশি টাকা, আমেরিকান ডলার ও ভারতীয় টাকা নিত সে। সেই অর্থ নিজের মুদ্রা বিনিময় সংস্থা ও হাওয়ালার মাধ্যমে পাকিস্তান-সহ বিভিন্ন দেশে পাচার করে দিত। এ দেশে নিজের নামে কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছিল আজাদ। ওই সমস্ত অ্যাকাউন্ট থেকে এখনও পর্যন্ত ৬২ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ঘনিষ্ঠ কয়েক জনের সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও টাকা পাচার করেছিল আজাদ।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, আজাদ পাকিস্তানি কয়েক জন অনুপ্রবেশকারীকেও ভারতীয় নাগরিকত্ব পাইয়ে দিয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ রাজ্যে বসে আজাদ পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তি করছিল কি না, তা-ও জানারচেষ্টা হচ্ছে।