• হাইকোর্টের রায় খারিজ সুপ্রিমে, বাতিল ট্রান্সফার
    এই সময় | ১৮ জুন ২০২৫
  • এই সময়: এক শিক্ষিকার আর্জি মেনে তাঁকে বাপের বাড়ির কাছাকাছি কলেজে বদলিতে সায় দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার। সেখানে অবশ্য বদলির আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছে। এই সূত্রে প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষক–শিক্ষিকাদের বদলির আর্জি ও তার নেপথ্যের কারণ ঘিরে।

    বাপের বাড়ির কাছে, উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা শ্রী চৈতন্য কলেজে বদলি চেয়েছিলেন ওই শিক্ষিকা। কারণ, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ১৬৫ কিলোমিটার দূরে ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী কলেজে পড়াতে যেতে হয় তাঁকে। যে জন্য বৃদ্ধ মা–বাবার দেখভালে সমস্যা হচ্ছে। এই কারণেই কলকাতা হাইকোর্টে যান তিনি। হাইকোর্ট সায় দিলেও রাজ্য সরকার শীর্ষ আদালতে গেলে বদলির নির্দেশ বাতিল তো হয়েইছে, পাশাপাশি ট্রান্সফারের ব্যাপারে হস্তক্ষেপের এক্তিয়ার আদৌ আদালতের আছে কি না, সে প্রশ্নও তুলেছে সর্বোচ্চ কোর্ট।

    আবেদনকারী শিক্ষিকা ২০১৬ সাল থেকে সংস্কৃত পড়ান ঘাটালের ওই কলেজে। ট্রান্সফারের জন্য কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন তিনি। সেখানে রাজ্যের আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন — বিষয়টা আদৌ জনস্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত কি? যদিও হাইকোর্ট রাজ্যের যুক্তি খারিজ করে শিক্ষিকাকে বদলির নির্দেশ দেয়।

    এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমে যায় রাজ্য সরকার। হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেন স্টেটের আইনজীবী। তাঁর দাবি, শিক্ষিকা কোথায় কাজ করবেন, সেটা তাঁর পছন্দ বা অধিকার হতে পারে না। এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে নিয়োগকর্তার। কোর্টও এতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এবং এটা জনস্বার্থও নয়। ওই শিক্ষিকা আবার শীর্ষ কোর্টে আবেদন করেন — বিষয়টি মা‍নবিক দিক থেকে দেখা হোক। তাঁর প্রবীণ মা–বাবার দেখভালের কথাও বিচার করা হোক।

    দু’পক্ষের যুক্তি শুনে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এমন ব্যক্তিগত কারণে বদলির নির্দেশ দেওয়া হলে ভবিষ্যতে বিষয়টা ঠেকানো যাবে না। আরও অনেক টিচারই এমন কারণ দেখিয়ে ট্রান্সফার চাইবেন। এতে পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হবে। তা ছাড়া ওই শিক্ষিকাকে বদলি করলে কলেজের ছাত্র–শিক্ষক অনুপাত বর্তমানের ১:১৮২ (অর্থাৎ ১৮২ জন পড়ুয়া পিছু ১ জন টিচার) থেকেও খারাপ হয়ে ১:২৪২–এ দাঁড়াবে। এতে পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হবে।

    শিক্ষিকার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এক্রামুল বারি। তিনি বলেন, ‘সরকার যদি নতুন নিয়োগ না করে, তা হলে এ ভাবে ছাত্র–শিক্ষক অনুপাত দেখিয়ে সব বদলিই বন্ধ হয়ে গেলে শিক্ষকরা কোনও কারণ দেখিয়েই ট্রান্সফার হতে পারবেন না। সুপ্রিম কোর্ট এই দিকটাও খতিয়ে দেখতে পারত।’

    এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যের যে টিচাররা ইতিমধ্যে বদলির জন্য মামলা করেছেন বা আবেদন জানিয়েছেন, তাঁদের কী হবে? কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটা–র সভাপতি শুভোদয় দাশগুপ্ত জানান, ২০১৭ সালে শিক্ষা আইনের ‘পাবলিক ইন্টারেস্ট’–এ যথেচ্ছ ভাবে শাস্তিমূলক বদলি করেছে সরকার।

    কলকাতা হাইকোর্টে গিয়ে বদলিগুলি আটকানো গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘এই শিক্ষিকার ক্ষেত্রে তো সরকার মিউচুয়াল ট্রান্সফারের পথে হাঁটতে পারত। অর্থাৎ, একই সাবজেক্টে অন্য কোনও শিক্ষক যদি ঘাটালে যেতে চাইতেন, তাঁর জায়গায় এই শিক্ষিকাকে বদল‍ি করা যেত। কিন্তু সরকার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে হাঁটছে!’

    তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপা–র সহ–সভাপতি সুমন মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা যুক্তি, ‘ওই শিক্ষিকা তো মিউচুয়াল ট্রান্সফারের আবেদন করেননি। তা হলে সরকার অমানবিক, এমন কথা বলাই যায় না।’ তাঁর দাবি, কলেজ শিক্ষকদের বদলির জন্য শিগগিরই পোর্টাল খুলবে। যাঁরা অপেক্ষায় আছেন, তাঁরা সুযোগ পাবেন।

  • Link to this news (এই সময়)