এই সময়: এলবিডব্লিউ বা লো বার্থ ওয়েট। ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়ে সদ্যোজাতের ওজন ২.৫ কেজি-র কম হলে তাকে এলবিডব্লিউ বলে। পঞ্চম রাষ্ট্রীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা বা ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে-৫ (এনএফএইচএস)-এর পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে ২০২১ সালে প্রায় ৪২ লক্ষ নবজাতক লো বার্থ ওয়েট নিয়ে জন্মেছিল।
আর তাৎপর্যপূর্ণ হলো, এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই মাত্র চারটি রাজ্যের— উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গ। বিষয়টি গবেষণাপত্রের আকারে মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত ‘ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল (বিএমজে) গ্লোবাল হেলথ’ বিজ্ঞানপত্রিকায়। মনে করা হচ্ছে, আর্থসামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া, মায়ের অপুষ্টি এবং নাবালিকা বিবাহের কারণেই এমন ছবি।
বিষয়টি এ দেশের মাথাব্যথা হলেও গবেষণাটি হয়েছে একেবারে আন্তর্জাতিক স্তরে। আমেরিকার ডিউক ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েকটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা মিলে ভারতের রাজ্যভিত্তিক এলবিডব্লিউ সংক্রান্ত গবেষণাটি করেছেন এনএফএইচএস-এর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে।
তাতেই গবেষকরা উদ্বেগের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন, প্রসূতিদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিশ্চিত ভাবেই এই চারটি রাজ্যে কোনও ভাবে সমস্যার শিকার হয়েছে। এর নেপথ্যে থাকতে পারে আর্থসামাজিক নানা কারণও। যদিও উড়িয়ে দেওয়া হয়নি এই চারটি রাজ্যের বিপুল জনসংখ্যা ও জনঘনত্বের কথাও। কী দেখা যাচ্ছে রিপোর্টে? গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, ২০২১ সালে প্রায় ৪২ লক্ষ শিশু কম ওজন এবং স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট আকার নিয়ে জন্মেছিল, তার মধ্যে এলবিডব্লিউ ছিল উত্তরপ্রদেশে ৮.৮০ লক্ষ, বিহারে ৪.৩০, মহারাষ্ট্রে ৩.৯৯ লক্ষ এবং পশ্চিমবঙ্গে ৩.১৮ লক্ষ। সম্মিলিত ভাবে যা গোটা দেশের প্রায় ৪৭%।
আর ছোট আকার নিয়ে জন্মানো শিশুর সংখ্যা ছিল উত্তরপ্রদেশে ৪.৬২ লক্ষ, বিহারে ৩.১৮, মহারাষ্ট্রে ২.৬১ লক্ষ ও পশ্চিমবঙ্গে ২.০৮ লক্ষ। যা সার্বিক ভাবে দেশের মধ্যে ৫০% প্রায়। এনএফএইচএসের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন, সারা দেশেই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরক্ষর অথবা খুব কম শিক্ষিত প্রসূতিদের ক্ষেত্রেই এলবিডব্লিউ সন্তান প্রসবের হার বেশি। এ ব্যাপারে প্রশ্ন অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী শশী পাঁজা কিংবা রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা স্বপন সোরেনের।
তাঁরা কেউ ফোন তোলেননি, জবাবও দেননি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য দপ্তরের এক শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক বলেন, ‘আপাতত আমরা এলবিডব্লিউ-এর চেয়েও বেশি নজর দিচ্ছি শিশুমৃত্যু কমানোর দিকে। এবং সাফল্যও পাচ্ছি। গত পাঁচ বছরে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে প্রতি হাজারে শিশুমৃত্যুর হার ২৭ থেকে কমতে কমতে এখন ১৮ হয়েছে। প্রসূতির সার্বিক স্বাস্থ্যে নজর দেওয়ার পরোক্ষ প্রভাবে এলবিডব্লিউ নবজাতকের সংখ্যাও কমেছে।
২৫% থেকে কমে গত কয়েক বছরে এলবিডব্লিউ-এর হার ২২% বা তার আশেপাশে রয়েছে।’ ওই স্বাস্থ্যকর্তা জানান, এই চারটি রাজ্যে যেহেতু জনসংখ্যা তথা প্রসূতির সংখ্যা অন্য অধিকাংশ রাজ্যের চেয়ে বেশি, তাই অঙ্কের সাধারণ নিয়মেই এই চারটি রাজ্যে অপুষ্ট প্রসূতির সংখ্যাও বেশি।
তাঁর মতে, ‘সদ্যোজাত কেমন ওজন নিয়ে জন্মাবে তা তার মায়ের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির উপর নির্ভরশীল। যা নির্ভর করে পরিবারের দেখভাল ও আর্থসামাজিক অবস্থানের উপর। গর্ভাবস্থাকালীন চেক-আপে জোর দেওয়ার পরেও সে জন্য প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি এ ক্ষেত্রে। এবং সর্বোপরি রয়েছে আর্থসামাজিক কারণে নাবালিকা বিবাহের প্রবণতা। ১৮ বছরের কম বয়সে সন্তানধারণ করলে সেই সন্তানেরও সুস্থ-স্বাভাবিক জন্মানোর সম্ভাবনা কমে যায়।’