এই সময়: অবশেষে বর্ষা এল দক্ষিণবঙ্গে। অবশ্য নির্ধারিত ১৫ জুন নয়, তার চেয়ে দু’দিন দেরিতে। দেরিতে এলেও শুরুটা কিন্তু বীরেন্দ্র সেহবাগের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের মতো হতে চলেছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া অফিস। আজ, বুধবার দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় ভারী, অতি ভারী এবং চরম ভারী বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি হয়েছে।
এ বছর ২৯ মে দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ঢুকে পড়ে উত্তরবঙ্গে। উত্তরে মৌসুমি বায়ু প্রবেশের ৭–৮ দিনের মধ্যেই সাধারণত বর্ষার বাতাস ঢোকে দক্ষিণবঙ্গে। কিন্তু এ বছর সেটাই বেড়ে হলো ১৮ দিন। গত বছরও অনেকটা এমনই ঘটেছিল। ২০২৪–এ উত্তরবঙ্গে বর্ষা ঢোকে ৩১ মে। আর তার ২২ দিন বাদে, ২১ জুন দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা শুরু হয়। আবহবিদরা জানিয়েছেন, জলীয় বাষ্পে পূর্ণ বাতাসের প্রাথমিক প্রবাহটি ভারতের মূল ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ার পরে সাধারণত কয়েক দিনের জন্য গতি হারায়। এই সময়ে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপের মতো ‘ওয়েদার সিস্টেম’ তৈরি হয়ে দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে নতুন করে শক্তিশালী করে তোলে। ভারতে বর্ষাকালের এটাই দস্তুর।
এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মৌসুমি বায়ুর প্রাথমিক প্রবাহ কেরালায় ঢুকেছে ২৪ মে। সেই প্রবাহই আরও এগিয়ে উত্তর–পূর্ব ভারত ঘুরে ২৯ মে ঢোকে উত্তরবঙ্গে। তার পরে দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সমুদ্র একেবারে শান্ত হয়ে যায়। যে কারণে মৌসুমি বাতাস আটকে পড়ে উত্তরবঙ্গেই। ১৪ জুন মৌসম ভবন জানায়, বঙ্গোপসাগরে একসঙ্গে দুটো ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। যার প্রভাবে সমুদ্র থেকে বিপুল পরিমাণে জলীয় বাষ্প ঢুকতে শুরু করেছে। এরই সঙ্গে উত্তরবঙ্গে থমকে যাওয়া দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নীচের দিকে নামতে শুরু করে। মঙ্গলবার আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশের দক্ষিণে যে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছিল, সেটি শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
এরই জেরে মঙ্গলবার সকালে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়। পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ এবং হুগলির বিভিন্ন অংশে বিকেলের দিকে বৃষ্টির প্রাবল্য বাড়তে থাকে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় আজ, বুধবার চরম ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কোনও জায়গায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২০ সেন্টিমিটারের থেকে বেশি বর্ষণ হলে তাকে ‘চরম ভারী’ বৃষ্টি বলে।
ঝাড়গ্রাম, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া, বীরভূম ও পূর্ব বর্ধমানেও আজ ‘অতি ভারী’ বৃষ্টির (৭–২০ সেমি) পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে ভারী বৃষ্টির (৭–১১ সেমি) সম্ভাবনা আছে। প্রাবল্য কিছুটা কমলেও কাল, বৃহস্পতিবারও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা খুব বেশি। পাশাপাশি রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়ার পূর্বাভাস থাকায় আজ মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
কলকাতা নিয়ে আলাদা ভাবে কিছু না জানানো হলেও বৃষ্টিপাত চলবে মহানগরেও।