বাবার শ্রাদ্ধ শেষ করেই মাঠে, ইডেনে নজর কাড়লেন বনগাঁর রাজু
বর্তমান | ১৮ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, বনগাঁ: বাবার শ্রাদ্ধের কাজ শেষ করে ইডেনে নজর কাড়লেন বনগাঁর যুবক রাজু হালদার। বেঙ্গল প্রো টি ২০ লিগে সার্ভোটেক শিলিগুড়ি স্ট্রাইকার্সের হয়ে খেলছেন রাজু। প্রথম খেলায় নিজের দল হারলেও নজরকাড়া বোলিং করে তিনটি উইকেট তুলে নিয়েছেন বনগাঁর এই বাঁহাতি স্পিনার। ২৮ মে তাঁর বাবা বিশ্বনাথ হালদারের মৃত্যু হয়। ১১ জুন বাবার পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করে বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ইডেনে অ্যাডামস হাওড়া ওয়ারিয়র্সের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলেন তিনি। পরদিন ভোরে ট্রেনে করে বনগাঁ পৌঁছে নিয়মভঙ্গের কাজ সম্পন্ন করে রাতে আবার ফিরে যান ইডেনে। রেল দলের খেলোয়াড় তিনি। চাকরি করছেন রেলেই। রাজু বলেন, ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছি। বাবা রিকশ চালাতেন। চাকরি পাওয়ার পর বাবাকে রিকশ চালাতে বারণ করেছিলাম। বনগাঁর হাটে গিয়ে পড়ে যান বাবা বিশ্বনাথ হালদার। পাকস্থলীর পাশে ছিদ্র হয়ে পিত্তরস বেরিয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।
ছোটবেলা থেকেই রাজুর ক্রিকেটের প্রতি তীব্র ভালোবাসা ছিল। কিন্তু রিকশচালক বাবার পক্ষে যে ছেলেকে ক্রিকেট শেখানো সম্ভব নয়, সেটা ভালোই বুঝেছিলেন তিনি। তাই বাড়ির পাশে এক মাঠে একটি কোচিং সেন্টারে প্র্যাকটিস দেখতেন তিনি। মাঠের বাইরে বল চলে গেলে কুড়িয়ে এনে দিতেন। সেটাই ছিল তাঁর ডিউস বলে প্রথম হাত দেওয়া। এদিকে, রোজ একটি ছেলেকে মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এবং তাঁর বল ছুড়ে দেওয়ার ধরন কোচের নজরে আসে। রাজু ক্রিকেট খেলতে চান কি না, জানতে চান সেই কোচ। রাজু তখন বাবাকে বলেন খরচের কথা। কিন্তু গরিব বাবা তাতে রাজি হননি। বনগাঁর অপর এক কোচ খবর পেয়ে রাজুকে ডেকে নেন। রাজুর বোলিং স্টাইল সেই কোচের নজর কাড়ে।
কোচিং তো হল, কিন্তু ক্রিকেট সরঞ্জামের খরচ আসবে কোথা থেকে? তাই পড়াশোনার পাশাপাশি কাগজের প্লেট তৈরির কারখানায় কাজ নেন রাজু। করেছেন সেলসম্যানের কাজও। সেই উপার্জনের টাকায় কিনতেন বল, প্যাড, গ্লাভস। সঙ্গে একগুচ্ছ স্বপ্ন। এরপরে খেলোয়াড়দের জল খাওয়াতে হবে, এই শর্তে কলকাতার এক দ্বিতীয় ডিভিশন ক্লাবে তাঁকে সই করান কোচ। একদিন গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচে এক খেলোয়াড় না আসায় রাজুকে খেলানো হয়। ওই ম্যাচে তিনটি উইকেট নিয়ে সকলের নজরে পড়ে যান রাজু। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
তবে ক্রিকেটে ছেলে নাম করলেও কখনও মাঠে গিয়ে ছেলের খেলা দেখেননি বাবা। বলেছিলেন, যেদিন ছেলের খেলা টিভিতে দেখাবে, সেদিন দেখবেন। গত বছর বেঙ্গল প্রো টি-২০ টুর্নামেন্টে ছেলের খেলা টিভিতে দেখেছিলেন বাবা। এরপর মাঠে যাওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ছেলের খেলা দেখতে মাঠে যাওয়া আর হল না বাবা বিশ্বনাথ হালদারের।