বিদেশি পর্যটকদের রসনাতৃপ্তিতে মেনুতে থাকছে পান্তা ও কচুশাক
বর্তমান | ১৮ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির ‘দ্য প্যালেস’ রিসর্টে এবার থাকছে দেশি খাবারের ছোঁয়া। শতাব্দী প্রাচীন রাজবাড়ির খাবারে মুঘল ও দেশীয় রন্ধন প্রণালীর ঐতিহ্য মিশে আছে। রিসর্টের অতিথিরা এবার মাটির হাঁড়িতে রাখা পান্তা ভাত, কচুর শাক, চিংড়ি ভাজা, দেশি পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা ও আমপোড়া শরবতের স্বাদ পাবেন। ভারতীয় পর্যটন মন্ত্রক দ্য প্যালেস রিসর্টকে ইতিমধ্যেই বেসিক হেরিটেজের স্বীকৃতি দিয়েছে। ঝাড়গ্রামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিদেশি পর্যটকদের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির রাজপুরুষরা অতীতে ‘মুঘল-ই-দাওয়াত’ দিতেন। অতিথিদের জন্য রাজকীয় মোগল খানাপিনার আয়োজন থাকত। ব্রিটিশ শাসনকালে ঝাড়গ্রামে আসা ইংরেজ রাজপুরুষরা দেশি খাবারের ভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। রাজবাড়ির রন্ধনশালায় মিলেমিশে যায় নানা সংস্কৃতির দেশীয় খাবার। সেই সংস্কৃতি আজও প্রবহমান। রাজ পরিবারের উদ্যোগে পুরাতন ঝাড়গ্রামে দ্য প্যালেস রিসর্ট গড়ে উঠেছে। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন এই রিসর্ট, পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সারাবছর পর্যটকরা এখানে আসেন। ভারতীয় পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বেসিক হেরিটেজের স্বীকৃতি মেলায় ভারত সরকারের পর্যটনস্থানে রাজবাড়ির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভারতীয় দূতাবাসে দর্শনীয় স্থানের তালিকায় ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি জায়গা করে নিয়েছে। দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ‘দ্য প্যালেস’ রিসর্ট কর্তৃপক্ষের তরফে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিদেশি পর্যটকদের কাছে ঝাড়গ্রামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে। রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় থালির সঙ্গে পান্তাভাত, কচুর শাক, চিংড়ি ভাজা, দেশি পেঁয়াজও পরিবেশন করা হবে।
ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির উত্তরপুরুষ বিক্রমাদিত্য মল্লদেব বলেন, মুঘল সম্রাট আকবরের নির্দেশে রাজপুত সেনাপতি মানসিংহের সঙ্গে আমার পূর্বপুরুষ সর্বেশ্বর সিংহ এখানে এসেছিলেন। স্থানীয় মাল রাজাদের পরাজিত করে ‘মল্লদেব’ উপাধি পেয়েছিলেন। রাজপরিবারে দীর্ঘ সময় ধরে রাজস্থানী ও মুঘল খানাপিনার রেওয়াজ ছিল। পরবর্তী সময়ে রন্ধনশালায় ফরাসী ও ইটালীয় খাবারের চলও শুরু হয়। রাজবাড়িতে মিশ্র রন্ধনশৈলীর জন্ম হয়। রাজবাড়ির সংগ্ৰহশালায় পাওয়া তথ্যে উল্লেখ আছে, ইংরেজ রাজপুরুষরা শিকার করে আনা খাবার দেশীয় পদ্ধতিতে হাত দিয়ে খেতেন। অরণ্য অধ্যুষিত এই এলাকার খাবারের প্রতিও তাঁদের আগ্ৰহ জন্মায়। বাঙালি সংস্কৃতিতে পান্তা ভাত খাওয়ার চল দীর্ঘদিনের। দেশ ও বিদেশ থেকে যেসব অতিথিরা আসবেন, তাঁদের সকলের কাছে ঝাড়গ্রামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে। রাজকীয় থালির পাশাপাশি মেনুতে থাকবে পান্তা ভাতও। ঝাড়গ্রাম হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, দ্য রিসর্ট প্যালেস বেসিক হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছে। জেলার পর্যটনের প্রসারে যা গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। জেলায় বিদেশি পর্যটকদের আসার সংখ্যা বাড়বে। পর্যটকদের কাছে জেলার সংস্কৃতি, খাবার তুলে ধরার এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
ঝাড়গ্রাম পর্যটন বিভাগের আধিকারিক বিধান ঘোষ বলেন, পর্যটনের প্রসারে নানা নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম পর্যটনস্থল এই জেলা। আমরা আশাবাদী, এবার বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়লে জেলার পর্যটনের চেহারা বদলে যাবে। • প্রতীকী চিত্র