• কৃষিজমির চরিত্র বদল না করেই তৈরি হচ্ছে বাড়িঘর, দোকানপাট! সিউড়িতে রাজস্ব হারাচ্ছে প্রশাসন
    বর্তমান | ১৮ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: কৃষিজমির উপরেই কংক্রিটের জঙ্গল তৈরি হচ্ছে। কোথাও বসতবাড়ি, আবার কোথাও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সিউড়ি মহকুমার নানা প্রান্তে ঢুঁ মারলেই আকছার এই দৃশ্য নজরে পড়বে। ফলে ক্রমশ কৃষিজমির পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। তবে এখানেই সমস্যার শেষ নয়। অভিযোগ, বহুক্ষেত্রেই কৃষিজমির চরিত্র বদল না করেই বসতবাড়ি কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। ঘটনায় জেলা প্রশাসনের কর্তারা যথেষ্টই উদ্বিগ্ন। সমস্যা সমাধানে জেলাজুড়ে কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে অভিযোগ প্রকাশ্যে এলেই প্রশাসনের তরফে দ্রুত কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, চাষের জমি বেআইনিভাবে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে জরিমানা করা হচ্ছে। 

    সিউড়ির মহকুমা শাসক সুপ্রতীক সিনহা বলেন, চাষের জমি ক্রমশ কমছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। বহু ক্ষেত্রে জমির চরিত্র বদল না করার অভিযোগও আসছে। সেক্ষেত্রে আমরা জরিমানার পথে হাঁটছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা সতর্ক নজর রাখছি। চাষযোগ্য জমি সহ জঙ্গল এলাকার জমির চরিত্র বদলের জেরে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। 

    একসময় কৃষিজমিতে বছরভর ধান, পাট সহ অন্যান্য ফসল চাষ হতো। যদিও বর্তমান সময়ে জেলার চাষিদের একাংশ কৃষিকাজে আগ্রহ হারাতে শুরু করেছে। চাষিদের অভিযোগ, চাষের কাজে জলের সমস্যা সহ প্রয়োজনীয় সার সহ অন্যান্য উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু, সেই অর্থে লাভ মিলছে না। এই পরিস্থিতিতে কেউ নিজের জমিতেই বসতবাড়ি কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। আবার কেউ জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে অভিযোগ, বহু জমির চরিত্র বদল না করেই বসতবাড়ি থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত সঠিক কত পরিমাণ কৃষিজমিতে কংক্রিটের জঙ্গল গড়ে উঠেছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান অবশ্য প্রশাসনের তরফে মেলেনি। ঘটনায় চাষিদের একাংশও উদ্বিগ্ন। তাঁদের কথায়, এমনটা চলতে থাকলে জেলার কৃষিকাজ একটা সময় মুখ থুবড়ে পড়বে।  

    সিউড়ির পুরন্দরপুরের চাষি শেখ আমেরুল বলেন, চাষের কাজের ক্ষেত্রে জলের একটা সমস্যা রয়েছে। তবে আমরা প্রতিকূলতা কাটিয়ে চাষবাস এখনও চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কতদিন পারব তা জানা নেই। যেভাবে চাষের জমিতে বাড়িঘর ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তা নজরে এলে খুবই খারাপ লাগে। শেখ আমির চাঁদ বলেন, এখনও চাষের কাজ করি। তবে, লাভ নেই সেভাবে। তাই আমার চাষের জমির একটা অংশে বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। আমার এক আত্মীয় বাড়ি তৈরি করছেন। সমস্ত নিয়ম মেনেই নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। শাসকদলের এক নেতা বলেন, এটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। অহরহ এই কাজ চলছে। জমির চরিত্র বদল না করেই নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করার কেউ নেই। কারণ, প্রতিবাদ করলেই হুমকির মুখে পড়তে হবে। তাই আমরাও চুপ থাকি। তবে প্রশাসন আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ভালো হয়।
  • Link to this news (বর্তমান)