নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের নাম ভাঁড়িয়ে তোলাবাজির ছক কষছে ছিঁচকে দুষ্কৃতীরা। প্রথমে তারা এলাকায় মাও নামাঙ্কিত পোস্টার সাঁটিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে। পরে বাড়িতে হুমকি চিঠি পাঠিয়ে তোলাবাজির মতলব করছে। সম্প্রতি খাতড়া থানার বৈদ্যনাথপুর অঞ্চলের এক বাসিন্দার বাড়িতে লাল কালিতে লেখা হুমকি চিঠি পৌঁছয়। তাতে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। চিঠিতে উল্লেখিত তারিখের মধ্যে ওই টাকা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে না দিলে ওই ব্যক্তির দুই নাতির ক্ষতি করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। গত এক বছরে রাইপুর, তালডাংরা সহ একাধিক জায়গায় মাওবাদী নামাঙ্কিত হুমকি পোস্টার উদ্ধার হয়। ওইসব ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিস স্থানীয় দুষ্কৃতীদের হাত রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে।
বাঁকুড়া জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, হুমকি চিঠি দেওয়ার ঘটনায় খাতড়া থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, এর পিছনে স্থানীয় দুষ্কৃতীরা রয়েছে। তোলাবাজির লক্ষ্যেই জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের নাম ভাঁড়িয়ে চিঠি, পোস্টার লেখা হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের চিহ্নিতকরণের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, একসময় বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল মাও সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর ছিল। এজেলার রানিবাঁধ, রাইপুর, বারিকুল, সারেঙ্গা, সিমলাপাল থানা এলাকা মাওবাদী অধ্যুষিত হিসেবে পরিচিত ছিল। মাও নাশকতা ও হামলায় বারিকুল-সারেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের মৃত্যু হয়। তখন পুলিস কোণঠাসা ছিল। তবে, রাজ্যে পরিবর্তনের পর মাওবাদী আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যায়। বর্তমানে ভিনরাজ্য থেকে মাঝেমধ্যে মাওবাদী নেতা ও তাদের পৃষ্টপোষকরা জঙ্গলমহলে আনাগোনা করলেও স্থানীয়দের সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
পুলিস ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গলমহলে সক্রিয় থাকার সময় মাওবাদীরা ব্যবসায়ী, ঠিকাদার ও ধনীদের কাছে টাকা আদায় করত। সেই টাকায় তারা নিজেদের তহবিল পুষ্ট করত। তা দিয়ে অস্ত্র কেনা থেকে শুরু করে নিজেদের জঙ্গলজীবনের দৈনন্দিন খরচ চালাত। ওইসময় ভয়ে অনেকেই তাদের দাবিমতো টাকা দিত। তবে, বর্তমানে আর সেই পরিস্থিতি নেই। তা সত্ত্বেও দুষ্কৃতীদের একাংশ তোলাবাজি করতে মাওবাদীদের দেখানো পথ অনুসরণ করছে।
জঙ্গলমহলের থানাগুলিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা এক পুলিস আধিকারিক বলেন, বাম আমলে রাস্তা সংস্কার হোক বা নতুন কোনও সরকারি ভবন তৈরি, এলাকায় নির্মাণ সামগ্রী ফেলার সঙ্গে সঙ্গে ঠিকাদারের কাছে মাওবাদীদের টাকা চেয়ে পাঠাত। টাকা না দিলে নির্মাণ শ্রমিকদের তাঁবুতে হামলা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হতো। রানিবাঁধের সড়ক নির্মাণের বরাত পাওয়া এক ঠিকাদার বাধ্য হয়ে কাজ শুরুর আগেই পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যান। ওইসময় মাওবাদীদের সঙ্গে দুষ্কৃতীদের একাংশও মিশে থাকত। মাওবাদীরা বিদায় নিলেও দুষ্কৃতীরা নিজেদের কুকর্ম ত্যাগ করতে পারেনি। এখন তারাই নতুন করে এসব করছে বলে আমাদের অনুমান। তবে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। টাকা না পেলে এমনিতেই ছিঁচকে দুষ্কৃতীরা রণেভঙ্গ দেবে। এরপরেও কেউ হুমকি চিঠি পেলে দ্রুত পুলিসকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।