কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার বছর পার, ক্ষতিপূরণ পাননি ছোট নির্মলজোতের চাষিরা
বর্তমান | ১৮ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: ঠিক এক বছর আগে, ১৭ জুন রাঙাপানিতে ট্রেন দুর্ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। জখম হয়েছিলেন বহু ট্রেন যাত্রী। মঙ্গলবার ছিল সেই কালা স্মৃতির বর্ষপূর্তি। সেদিন ছিল ঈদ। গ্রামের মসজিদে সবে নামাজ পাঠ শেষ হয়েছে। ঘরে ফিরে উৎসবে মেতে ওঠার প্রস্তুতি। নামাজ শেষ হতেই বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে রাঙাপানির ছোট নির্মলজোত। সব আনন্দ ভুলে গ্রামবাসীরা এগিয়ে যান রেল ট্র্যাকের দিকে। ঝাঁপিয়ে পড়েন উদ্ধার কাজে। এতকিছু করলেও আজও রেলের তরফে কোনও স্বীকৃতি কিংবা ফসলের ক্ষতিপূরণ গ্রামবাসীরা পাননি।
সেই ভয়াবহ স্মৃতি আজও বহন করছে ছোট নির্মলজোত। রেল লাইনের ধারে পড়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত মালগাড়ির দু’টি ওয়াগন। রাঙাপানিতে মালগাড়ির পিছনে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ধাক্কা মেরেছিল। ছোট নির্মলজোতের বাসিন্দাদের কানে আজও ভেসে বেরায় ট্রেন যাত্রীদের মৃত্যুর আগে যন্ত্রণার সেই চিৎকার। বাঁচার জন্য সাহায্যের আকুতি। কোচের ভিতর থেকে বাড়িয়ে দেওয়া সারি সারি হাত আজও তাঁদের স্মৃতিতে জীবন্ত।
উৎসব ভুলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেদিন একদল যুবক ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। মঙ্গলবার ফজলুর বলেন, সেদিন ঈদ ছিল। আনন্দ ভুলে গিয়ে সারাদিন উদ্ধারকাজ চালিয়ে গিয়েছি। ফোন করে পরিচিতদের গাড়ি এনে জখম যাত্রী, মৃতদেহ উদ্ধার করে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। দুর্ঘটনাস্থলে ক্রেন, অন্যান্য সরঞ্জাম ও গাড়ি নিয়ে যাওয়ার রাস্তা ছিল না। রেলের জমিও ছিল না। আমাদের খেতের উপর দিয়ে রাস্তা করে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের বহু কৃষি জমি ও ফসল নষ্ট হয়েছে। রেলের তরফে ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়নি।
অভিশপ্ত সেই মালগাড়ির দু’টি ওয়াগান এখনও পড়ে রয়েছে। অনেকটা কৃষিজমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা ধাতব টুকরো। এই অবস্থায় গত এক বছর জমিতে চাষ করতে পারছেন না গ্রামবাসীরা। এনিয়ে রেলের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। গ্রামবাসীরা বলেন, কিছু পাওয়ার আশায় নয়, মানবিক টানে সবকিছু ভুলে ঝাঁপিয়েছিলাম উদ্ধারকাজে। সেদিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ট্রেন দুর্ঘটনায় জখমদের দেখতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের কাজের প্রশংসা করেছিলেন। সাহসী যুবকদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিল সরকার।
ফজলুর বলেন, নবান্ন থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়েছে। আশা করছি, শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মতো এই যুবকরা ভালো কিছু পেতে চলেছে। যেখানে জমির ফসলের ক্ষতিপূরণটুকু দিল না রেল।
যদিও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জলকিশোর শর্মা বলেন, ওই দুর্ঘটনা ও স্থানীয়দের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে রেলের রেকর্ডে কী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, তা দেখতে হবে। ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনা। - ফাইল চিত্র।