সংবাদদাতা, পুরাতন মালদহ: মালদহে ঐতিহ্যবাহী রামকেলি মেলা চলছে। ওই মেলায় অংশ নেওয়া পুণ্যার্থীরা সরাসরি বাড়ি না গিয়ে ভিড় করতে শুরু করেছেন পুরাতন মালদহ শহরের মহাপ্রভুর ঠাকুরবাড়িতে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, রামকেলির পুণ্যার্থীদের ঠাকুরবাড়িতে এমন আগমনের ঘটনা ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে স্থানীয় শহরে ঐতিহ্য এবং গড়িমায় আজও অমলিন। আজও সেই রীতি চলছে। প্রতি বছরই প্রচুর ভক্ত এখানে এক দু’দিনের জন্য ভিড় জমান।
সোমবার রাতে আগত পুণ্যার্থীরা প্রাচীন ঠাকুরবাড়ির মধ্যেই আখড়া গড়েছেন। রামকেলি মেলা শেষ হলে আরও পুণ্যার্থী আসবেন বলে স্থানীয় মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই পুণ্যার্থীরা খোল এবং করতাল নিয়ে ভজন, কীর্তনে শামিল হন। শুধু তাই নয়, সেখান থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পরিক্রমা করেন। এদিন দুপুরে মহাপ্রভুর ভোগ অনুষ্ঠিত হয়। রীতি অনুযায়ী সেখানে ভক্তরা প্রসাদ পান। তবে পর্যটনের স্বার্থে মহাপ্রভুর প্রাচীন ঠাকুরবাড়িকে হেরিটেজ তকমা দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন আগত ভক্তরা।
মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, আনুমানিক ৫১০ বছর আগে শ্রীশ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু মালদহে চরণধূলি দিয়েছিলেন। জনশ্রুতি রয়েছে, তাঁর আগমন উপলক্ষ্যে পুরাতন মালদহে মহাপ্রভুর ঠাকুরবাড়ি নির্মাণ হয়। ফি বছর রামকেলি মেলার সময় প্রচুর ভক্তের সমাগম হয়। মেলার মধ্যে বা মেলা শেষে তাঁদের অনেকেই পুরাতন মালদহে চলে আসেন। অভিযোগ, মহাপ্রভুর প্রাচীন ঠাকুরবাড়ির জরাজীর্ণ দশা হয়ে রয়েছে। রং চটে গিয়েছে। দেওয়াল থেকে পলেস্তরা খসে পড়ছে। মন্দিরের দেওয়াল থেকে পুরনো ইট বেরিয়ে আসছে।
দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে মঙ্গলবার পুরাতন মালদহের এই ঐতিহ্যবাহী মন্দিরে এসেছিলেন উৎপল দাস। তিনি বলেন, আমরা ২০ জনের দল নিয়ে প্রথমে রামকেলি ধামে গিয়েছিলাম। তারপর পুরাতন মালদহে আসি। এখানে দু’দিন থাকব। ঠাকুর দর্শন করে বাড়ি ফিরব। ৪০ বছর ধরে এমন নিয়ম পালন করে আসছি। আগে আমার বাবা এমন করতেন। এই মন্দির বেশ পুরনো, সংস্কার করে পর্যটনের আওতায় আনা উচিত।
ঠাকুরবাড়ি মন্দিরে ছয় দশক ধরে পুজো করছেন ওড়িশার বাসিন্দা তথা সেবায়েত পূর্ণচন্দ্র ত্রিপাঠী। তিনি বলেন, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু, নিত্যানন্দ, বলরাম প্রভুর প্রাচীন বিগ্রহ রয়েছে। বিভিন্ন মহলে বলেও মন্দির সংস্কার হয়নি। রামকেলির সময় ভক্তরা আসেন। আমরা আপ্লুত।
স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার বশিষ্ঠ ত্রিবেদী বলেন, আমার এলাকার মধেই পুরনো মন্দিরটি রয়েছে। এই মন্দিরকে ঘিরে অনেক ইতিহাস রয়েছে। বাইরে থেকে প্রচুর ভক্ত আসেন। হেরিটেজ তকমা পাওয়ার জন্য অতীতে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। আবারও জেলা প্রশাসনকে বলব। সংস্কারের কথাও বলা হবে।