হদিশ নেই বর্ধমান বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২ কোটি টাকার। আধিকারিকদের সই এবং অ্যাডভাইসড নোট নকল করে ওই টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতানোর বিষয়টি ধরা পড়ার পরে তদন্তও শুরু করে সিআইডি। এ বার এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ নিমাইচন্দ্র সাহাকে।
কী ভাবে তোলা হয় টাকা?
নিমাইচন্দ্র সাহা যখন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন তখনই অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা বলে অভিযোগ। তাঁর মেয়াদের শেষ হওয়ার পূর্বেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি ফিক্সড ডিপোজিট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের সই ও অ্যাডভাইসড নোট নকল করে টাকা তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
আধিকারিকরদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স অফিসার এবং রেজিস্ট্রারের সই নকল করে ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে অন্য অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করে নেওয়া হয় টাকা।
ঘটনার সূত্রপাত
এই ঘটনার সূত্রপাত ২০২৪ সালে। বর্ধমানের একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কে ২১.৫৫ লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙানোর চেষ্টা করা হয়। নিয়মানুযায়ী স্বাক্ষরকারীর স্বাক্ষর সংক্রান্ত সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে ব্যাঙ্ক ম্যানেজারে জানতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ধরনের কোনও অ্যাডভাইসড নোট ইস্যুই করেনি।এরপরই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বর্ধমান থানায় এফআইআর করে।
ঘটনা জানার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ও অনান্য ব্যাঙ্ককে চিঠি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট সম্বন্ধে জানতে চায়। তখনই জানা যায়, বর্ধমান শহরের জেলখানা মোড়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের শাখা থেকে তিনটি ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়ে অন্য অ্যাকাউন্টে প্রায় ১ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা নিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপরই তৎকালীন রেজিস্ট্রার সুজিত কুমার চৌধুরী বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তী কালে তদন্তভার হাতে নিয়ে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
প্রাক্তন উপাচার্যকে তলব
এ বার সেই তদন্তে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য নিমাই চন্দ্র সাহাকে জিজ্ঞাসাবাদের করার জন্য ডেকে পাঠিয়েছে সিআইডি। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে বর্ধমানের সিআইডি অফিসে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
ছাত্র সংগঠনের দাবি
এই ঘটনায় শাসক ও বিরোধী দলের ছাত্র সংগঠন পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি তুলেছে।
এস এফ আই পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক ঊষশী রায় চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকেই আন্দোলন করছি। শুধু প্রাক্তন উপাচার্যই নয়, এর সঙ্গে আরও যে বা যারা যুক্ত আছেন তাঁদেরকেও শাস্তি দিতে হবে।’ একই কথা জানিয়েছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের ইউনিট প্রেসিডেন্ট আকাশ গড়াই। দোষীদের শাস্তির সঙ্গেই যেন ওই টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরৎ আসে তাও চাইছেন তিনি।
আর, এই দুর্নীতির মামলাকারী তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী রেজিস্ট্রার দেবমাল্য ঘোষের দাবি, উপাচার্যের অগোচরে এত টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে উঠে যাবে তা তিনি মনে করেন না। ঘটনার তদন্ত ঠিকমতো হলে আরও অনেক দুর্নীতির কথা জানা যাবে বলেও দাবি তাঁর।