২ কোটি টাকা কী ভাবে উধাও হল? বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্যকে তলব করল সিআইডি
আনন্দবাজার | ১৭ জুন ২০২৫
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ তছরুপের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রাক্তন উপাচার্য নিমাইচন্দ্র সাহাকে ডেকে পাঠাল রাজ্য সিআইডি। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে বর্ধমানের সিআইডি অফিসে হাজির হওয়ার জন্য তাঁকে বলা হয়েছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে কী ভাবে ২ কোটি টাকা উধাও হয়ে গেল, তা নিয়ে নিমাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে খবর।
এই ঘটনায় শাসক এবং বিরোধী, উভয় দলের ছাত্র সংগঠন পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি তুলেছে। পূর্ব বর্ধমানের এসএফআই জেলা সম্পাদক উষসী রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকেই আন্দোলন করছি। শুধু প্রাক্তন উপাচার্যই নন, এর সঙ্গে যাঁরা যাঁরা যুক্ত আছেন, তাঁদের অবিলম্বে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’’ এই ঘটনায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হয়েছে বলে দাবি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিট প্রেসিডেন্ট আকাশ গড়াইয়ের। তিনি জানান, বিষয়টি বিচারাধীন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উধাও হওয়া টাকা ফেরত আসুক এবং দোষীরা শাস্তি পান।
উল্লেখ্য, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে জমা রাখা হত বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ। অভিযোগ, নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ২০২৪ সালে আচমকা ২ কোটি টাকা ওই অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয়। এবং ওই টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোনও অ্যাকাউন্টে জমা না পড়ে এক ঠিকাদারের সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার সুজিতকুমার চৌধুরী বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে তদন্তে নামে বর্ধমান থানার পুলিশ। পরে তদন্তভার সিআইডির হাতে তুলে দেওয়া হয়। তদন্তে নেমে সিআইডি সাত জনকে গ্রেফতার করে। ১০ জনের নামে আদালতে চার্জশিট পেশ করে আদালতে। বাকি তিন অভিযুক্তের হদিস এখনও মেলেনি।
তদন্তে উঠে এসেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা কয়েকটি অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে। সিআইডি ওই অ্যাকাউন্টগুলি চিহ্নিত করে লেনদেন বন্ধের আবেদন জানায় আদালতে। তার প্রেক্ষিতে আদালত ওই অ্যাকাউন্টগুলি ফ্রিজ় করার অনুমতি দিয়েছিল। পরে অবশ্য আদালত অ্যাকাউন্টগুলি ডিফ্রিজ় করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে জমা পড়া টাকা ফেরত চেয়ে আদালতে আবেদন করায় বিষয়টি হাই কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। তবে উচ্চ আদালত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সিজেএমকে নির্দেশ দেয়।
উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট আর্থিক ‘দুর্নীতি’র তদন্তে নেমেছে ইডি-ও। ব্যাঙ্কের কয়েক জন আধিকারিককে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)-কে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট পেশ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী ৩০ জুন। সে দিন রাজ্য সরকারকে তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে রিপোর্ট জানাতে হবে। এই প্রেক্ষিতে প্রাক্তন উপাচার্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠাল সিআইডি।