• সিপিএমের ‘চুরি’! ৩০ বছর পর কনস্টেবলের চাকরি ফেরত পেতে ‘দিদি’র দ্বারস্থ হাওড়ার বাসিন্দা
    প্রতিদিন | ১৮ জুন ২০২৫
  • অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: পুলিশের জুনিয়র কনস্টেবলের চাকরির পরীক্ষা দিয়ে পাস করলেন একজন। কিন্তু, ওই একই নামে চাকরির কোনও পরীক্ষা না দিয়েই চাকরি পেয়ে গেলেন অন্য এক ব্যক্তি। কারচুপি করে যে ব্যক্তি চাকরি পেলেন তিনি বর্তমানে রাজ্য পুলিশে কর্মরত। আর যিনি চাকরি পেলেন না তিনি ৩০ বছর পরও বিচারের আশায় দিন গুনছেন। অবশেষে বিচারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।

    বিচার চেয়ে ‘দিদিকে বলো’-তে জানিয়েছেন হাওড়ার দাশনগরের বাসিন্দা শ্যামল দাশ। ১৯৯৫ সালে বাম আমলে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ থেকে রাজ্য পুলিশের জুনিয়র কনস্টেবল পদে চাকরির ডাক পেয়েছিলেন তিনি। তখন উচ্চ মাধ্যমিক পাস শ্যামলবাবুর বয়স ছিল ২২ বছর। হাওড়ার শিবপুর পুলিশ লাইনে তাঁর শারীরিক পরীক্ষা হয়েছিল। সেই পরীক্ষায় পাস করার পর তাঁর মৌখিক পরীক্ষাও হয়েছিল। শ্যামলবাবুর দাবি, মৌখিক পরীক্ষাতেও তিনি পাস করেছিলেন। কিন্তু চাকরি পাননি।

    তাঁর অভিযোগ, তাঁরই এলাকার এক বাসিন্দার নামও শ্যামল দাস, সেই ব‌্যক্তি চাকরিটা পেয়ে গিয়েছেন। কার্যত নামে কারচুপি করে ওই ব্যক্তিকে চাকরিটা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ ওই ব্যক্তিকে তাঁদের সঙ্গে কনস্টেবলের ওই পরীক্ষা দিতে দেখা যায়নি। শ্যামলবাবুর অভিযোগ, পরীক্ষা দিলেন তিনি অথচ একই নামের সুযোগ নিয়ে কারচুপি করে অন্য ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়া হল। দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএমের জমানায় এ নিয়ে শ্যামলবাবু ভয়ে কোনওদিন মুখ খুলতে পারেননি। তবে স্থানীয় এক সিপিএম নেতাকে জানিয়েছিলেন।

    শ্যামলবাবুর অভিযোগ, তৎকলীন সিপিএমের সেই স্থানীয় নেতা তাঁকে জানিয়েছিলেন, ওই নেতাকে ৮৫ হাজার টাকা দিলে তিনি শ্যামলবাবুর চাকরি করে দেবেন। কিন্তু সেদিন শ্যামলবাবু ঘুষ দিতে রাজি হননি। এমনকী টাকা দিতে না পারায় তাঁকে ওই সিপিএম নেতা অপমান ও গালিগালাজও করেছিলেন বলে অভিযোগ শ্যামলবাবুর। মৌখিকভাবে অনেককেই তাঁর চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। দাশনগর থানাতে গিয়েও তৎকালীন সময় অভিযোগ জানিয়েছিলেন শ্যামলবাবু।

    কিন্তু সেদিন কেউ তাঁর কথা শোনেননি। তাই চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় আজও দাশনগরের টালির চালের একচিলতে ঘরে বসে দিন গুনছেন শ্যামলবাবু। বললেন, “এতবছর কাউকে সাহস করে কিছু বলতে পারিনি। তবে ১৯৯৬ সালে একবার অভিযোগ নিয়ে দিদির বাড়িতে  গিয়েছিলাম। তখন সেভাবে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। এর পর গত ৩০ মে আমি দিদিকে বলোতে আমার দুঃখের কথা জানিয়েছি। আমার অভিযোগ জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আশা করছি এবার আমি বিচার পাব।”

    প্রসঙ্গত, বর্তমানে শ্যামলবাবু একটি কারখানায় ১০ হাজার টাকা বেতনের কাজ করেন। স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে টালির চালের এক চিলতে ঘরের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়ছে ছেলে শ্রেয়ান দাশ। শ্যামলবাবুর বাবা লক্ষ্মীনারায়ণ দাশ দাশনগরের আরতি কটন মিলের মেশিন অপারেটর ছিলেন। মিলে কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি করতেন। শ্যামলবাবু স্কাউট ও জেলা স্কুল ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। তৎকালীন হাওড়ার পুলিশ সুপার রাজেশ কুমার ও ডেপুটি পুলিশ সুপার শচীন শ্রীধর শিবপুর পুলিশ লাইনে শ্যামলবাবুকে কনস্টেবল পদের জন্য পরীক্ষা নিয়েছিলেন।
  • Link to this news (প্রতিদিন)